September 19, 2024
জাতীয়

অরিত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক হাসনা হেনাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি

 

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করে অপর শিক্ষক হাসনা হেনাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত। ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী মঙ্গলবার তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশ এবং মামলার বাদীর বক্তব্য শুনে এই আদেশ দেন।

আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এস আই জালাল আহমেদ জানান, আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) জাহিদুল কবীরের কাছে নথিপত্র পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী।

এখন মুখ্য মহানগর হাকিম মামলার নথি মহানগর দয়রা জজ আদালতে পাঠিয়ে দেবেন। সেখানেই অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে সিদ্ধন্ত হবে, ভিকারুননিসার বরখাস্ত দুই শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস এবং প্রভাতী শাখার প্রধান শিক্ষক জিনাত আরার বিরুদ্ধে এ মামলার বিচার চলবে কি না।

গতবছর ৩ ডিসেম্বর শান্তিনগরের বাসায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী। তার আগের দিন পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগে তাকে পরীক্ষা হল থেকে বের করে দিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ।

স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, অরিত্রী পরীক্ষায় মোবাইল ফোনে নকল নিয়ে টেবিলে রেখে লিখছিল। অন্যদিকে স্বজনদের দাবি, নকল করেনি অরিত্রী। এরপর অরিত্রীর বাবা-মাকে ডেকে নেওয়া হয় স্কুলে। তখন অরিত্রীর সামনে তার বাবা-মাকে অপমান করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে।

অরিত্রীর স্বজনরা বলছেন, বাবা-মার ‘অপমান সইতে না পেরে’ ঘরে ফিরে আত্মহত্যা করে এই কিশোরী। তবে অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস শিক্ষার্থী অরিত্রীর অভিভাবকদের অপমান করার কথা বরাবরই অস্বীকার করেছেন।

ওই স্কুলছাত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী গত ৪ ডিসেম্বর পল্টন থানায় দণ্ডবিধির ৩০৫ ধারায় যে মামলাটি দায়ের করেন, তার এজাহারে নাজনীন ফেরদৌস, জিনাত আরা ও হাসনা হেনার বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়।

তদন্ত শেষে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক কাজী কামরুল ইসলাম গত ২৮ মার্চ নাজনীন ফেরদৌস ও জিনাত আরার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় এজাহারের আরেক আসামি অরিত্রীর শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনাকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয় সেখানে।

মঙ্গলবার অভিযোগপত্র গ্রহণের ধার্য দিনে মামলার বাদী দিলীপ অধিকারীও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বিচারকের প্রশ্নে তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশের বিষয়ে তার কোনো আপত্তি নেই। এরপর বিচারক অভিযোগপত্র গ্রহণ করে হাসনা হেনাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন।

অরিত্রী অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় দণ্ডবিধির ৩০৫ ধারায় এ মামলার অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা। এই ধারায় কোনো শিশুকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১০ বছর কারাদণ্ড থেকে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত সাজার বিধান রয়েছে।

আসামিদের ‘নির্দয় ব্যবহার ও অশিক্ষকসুলভ আচরণে’ অরিত্রী অধিকারী আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয় বলে অভিযোগপত্রে উলে­খ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। মামলা দায়েরের পরদিনই শিক্ষক হাসনা হেনাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পরদিন আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। এরপর ৯ ডিসেম্বর জামিন পান হেনা।

আর নাজনীন ও জিনাত গত ১৯ জানুয়ারি ঢাকার হাকিম আবেদনে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান। অরিত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর বেইলি রোডের নামি এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা টানা কয়েক দিন স্কুলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে।  শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে আত্মহত্যায় ‘প্ররোচনার’ জন্য ওই তিন শিক্ষককে চিহ্নিত করা হলে তাদের বরখাস্ত ও এমপিও বাতিল করা হয়।

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *