অভয়নগরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন, ছাড়িয়ে যাবে অতীত রেকর্ড
মল্লিক খলিলুর রহমান, অভয়নগর
যশোরের অভয়নগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে বিলে বোরো ধানগাছে সোনালী ফসলের দোলায় কৃষক পরিবারের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে। অনেক পরিশ্রমের ফলন নিয়ে কৃষকের মুখে যেমন আনন্দ বিরাজ করছে তেমনি প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগ নিয়ে শঙ্কা ও রয়েছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফসলে কোন ক্ষতি হয়নি। যদি ভালো ভাবে ঘরে ধান তুলতে পারে তাহলে অতিতের তুলনায় এ বছর সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছেন কৃষকরা। উপজেলার দিয়াপাড়া গ্রামের বোর ধান চাষী লতিফ বিশ্বাস কৃষকদের এই স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিস তথ্যমতে অভয়নগরে ৮টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভায় ১৩ হাজার ১শ ২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। তবে এ উপজেলার বোরো ধান আবাদে শীর্ষে রয়েছে সিদ্দিপাশা ইউনিয়ন। আর জলাবদ্ধতার কারনে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়েছে পায়রা ও সুন্দলী ইউনিয়ন।
উপজেলার পায়রা ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সীমা বিশ্বাস ও কার্ত্তিক চন্দ্র গোলদার এবং সুন্দলী ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সিদ্দিকুর রহমানের সাথে কথা বলে জানা যায়, দক্ষিন পশ্চিম অঞ্চলের মরণফাঁদ দু:খ্য খ্যাত ভবদহ গ্রাসের কারনে ইউনিয়নের দুটি নিম্নাঞ্চলে এ বছর প্লাবিত থাকায় বোরো ধানের আবাদ কম হয়েছে । তবে এ অঞ্চল দিয়ে যদি সময় মত পানি নিষ্কাশন করা যেত তাহলে কৃষকদের এমন পরিস্থিতির স্বীকার হতো না।
সিদ্দিপাশা ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শেখ ওয়ালিউর রহমান বলেন, উপজেলার সবচেয়ে বেশি বোরো ধান চাষ হয়েছে সিদ্দিপাশা ইউনিয়নে। ১৯শ ৪০ হেক্টর জমিতে ৩১শ ৮০ জন কৃষকের চাষের মাধ্যমে প্রত্যেকটি গ্রামের খাল, মাঠ-ঘাট, বিল এবং পতিত জায়গার ধানগুলো সমান তালে পাক ধরেছে এবং সোনালী ধানগুলো ঝুলছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, দিনরাত পরিশ্রম করে ফসল ফলিয়েছি। ইনশাআল্লাহ এ বছর বোর ধান আবাধে ফলনও খুব ভাল হয়েছে। কিন্তু মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে তাদের মধ্যে দু:শ্চিন্তার কারন হয়ে দাড়িয়েছে ধান কাটা শ্রমিক সংকট। তারা আরও বলেন, এ সময় দেশের উত্তর অঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধান কাটার জন্য শ্রমিকরা আসতেন। কিন্তু মরনঘাতি করোনা ভাইরাসের কারনে এ বছর লোকজন কম আসার কারনে (শ্রমিক) কৃষাণের দিনমজুরি বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে তেমনি ধানকাটা কৃষাণ সংকট দেখা দিয়েছে। সময়মতো কিষাণ না পেলে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে অনেকেই আশংকা করছেন। শ্রমিক সংকট,প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা না দিলে আর ধানের ন্যায্যমূল্য পেলে উপজেলায় বোরোর বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।
কৃষক প্রদ্বিপ কুমার শীল জানান, এবার ফলন ভালো হয়েছে। বিগত সময়ে ধানের ন্যায্যমূল্য হতে বঞ্চিত হয়েছি। সরকার বেশি দামে ধান কিনলেও সাধারন কৃষকরা সরকারীভাবে তা বিক্রি করতে পারে না। এ বিষয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে আনুরোধ জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম ছামদানী জানিয়েছেন, অভয়নগর উপজেলায় এ বছর ১৩ হাজার ১শ ২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। আমরা বোর চাষীদের মাঝে প্রণোদনার আওতায় হাইব্রিড ধানের বীজ দিয়ে ছিলাম। এ উপজেলার মাঠে বিলে গত বছরের চেয়ে ৯% বেশী হাইব্রীড ধানের চাষ হয়েছে। সাধারনত খুকশীর তুলনায় হাইব্রীড ধানের উৎপাদন ফলন ভাল হয়। কৃষকরা সময়মত বীজ রোপন, সার, কীটনাশক ও পরিবেশ অনুকূলে পাওয়ায় বোরধানের বাম্পার ফলন পেয়েছে। কালবৈশাখি ঝড়ের আশংকা আছে বলে দ্রুত কৃষকদের ধান কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দিয়েছি। দ্রুত ধান কাটার জন্য আমাদের এখানে একটি কম্বাইন্ড হাড়ভেষ্টার মেশীন চলছে ও ৪টি (রিপার) ধান কাটা যন্ত্র দিয়ে কৃষকদের ধান কাটে দেয়া হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কষ্টে অর্জিত ফসল যেন ভাল ভাবে ঘরে তুলতে পারে সে জন্য আমরা কৃষকদের সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করছি। তবে স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারনে পায়রায় ৫শ ৫ হেক্টর, প্রেমবাগে ২শ ৫ হেক্টর, সুন্দলীতে ২শ ৫ হেক্টর, চলিশিয়াতে ২শ ৪০ হেক্টর, নওয়াপাড়া পৌরসভাতে ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়নি। এছাড়া এবছর হিটসটে ২ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। তিনি আরও বলেন, উপজেলার কৃষকরা ঘরে ধান তুলতে যদি কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে না পড়ে, তাহলে বোর ধান উৎপাদনে অতিতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করি।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়