অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
নিত্যপণ্যের অবৈধ মজুতদার এবং অসাধু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (২৪ এপ্রিল) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে নতুন ৪০টি ফায়ার স্টেশন উদ্বোধনকালে সরকারপ্রধান এ নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদিও করোনা ভাইরাসের জন্য সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। তার ওপর ইউক্রেন ও রাশিয়ার যে যুদ্ধ, সেই যুদ্ধ এর ওপর আরো বেশি প্রভাব ফেলছে। তারপরও আমি বলবো অনেক উন্নত দেশে এখন খাদ্যের জন্য হাহাকার। ইনফ্লেশন রেট কোথাও ১৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে। অনেক ইউরোপিয়ান দেশে ৭, ৮, ৯ শতাংশ ইনফ্লেশন (মূল্যস্ফীতি) রেট। তারপরও আমরা কিন্তু আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে। ‘
‘সেখানে যারা হোল্ডিং করবে বা যারা মানুষের এই প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে কোনো রকমের খেলা খেলতে যাবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। ’
দেশের মানুষকে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সেই সঙ্গে দেশের মানুষকেও বলবো, এই যুদ্ধের কারণে আপনারা জানেন যে বিদেশ থেকে যে সব জিনিস আমরা আমদানি করি সেগুলো আনা খুব কষ্টকর হয়ে গেছে, পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক দেশ তাদের উৎপাদিত পণ্য আর রপ্তানি করছে না বা তারাও বিপদে আছে। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশে- আমাদের যে মাটি, মানুষ আছে এটা ব্যবহার করে আমাদের নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। ‘
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। যেখানে যার যতটুকু আছে তা আবাদ করবেন। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস নিজেরা উৎপাদন করে নিজেরা ব্যবহার করার ব্যবস্থা নিতে হবে। যেন আমাদের কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে না হয়। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের সুরক্ষার জন্য, মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য, মানুষের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেই কাজের সুফলটা মানুষ যাতে পেতে পারে সেটাই আমরা চাই। ’
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশে স্বাক্ষরতার হার বেড়েছে, শিক্ষার হার বেড়েছে, মানুষের আয়ুস্কাল বেড়েছে, খাদ্য নিরাপত্তা আমরা দিতে পেরেছি। ’
নতুন ৪০টি ফায়ার স্টেশন উদ্বোধন
দেশের বিভিন্ন স্থানে নবনির্মিত ৪০টি ফায়ার স্টেশন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে নতুন করে দেশের পাঁচটি বিভাগের, ২৫টি জেলার, ৩৯টি উপজেলার ৪০টি ফায়ার স্টেশনের কার্যক্রম নতুন করে চালু হলো।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০০৯ সালে দেশে ফায়ার স্টেশন ছিল মাত্র ২০৪টি। বর্তমানে দেশে চালু ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ৪৫৬টি। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে নতুন আরও ৫৫টি ফায়ার স্টেশনের কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন তারা।
সারাদেশে প্রত্যেক উপজেলা ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে ফায়ার স্টেশন নির্মাণে তিনটি প্রকল্প চলমান। চলমান প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ফায়ার স্টেশনের মোট সংখ্যা হবে ৫৪৪টি।
ফায়ার স্টেশন নির্মাণ ছাড়াও অত্যাধুনিক অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করা, ফায়ার ফাইটারদের উন্নত প্রশিক্ষণসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সংস্থাটির সক্ষমতা বাড়াতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
ফায়ার স্টেশন এবং এর মূল্যবান যন্ত্রপাতি যথাযথভাবে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফায়ার স্টেশনগুলো এবং এর মূল্যবান যন্ত্রপাতি জনগণের সম্পত্তি। এগুলোর যথাযথ যত্ন নেবেন। সর্বোচ্চ পরিমাণ সেবা যাতে আমরা পেতে পারি সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। ’
অগ্নিকাণ্ড যাতে না ঘটে সে জন্য দেশের জনগণকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি জলাধার সংরক্ষণ, বিভিন্ন ভবন, কল-কারখানায় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন তিনি।
এছাড়া বিভিন্ন কল-কারখানা, বড় মার্কেটগুলোতে মাঝে মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে কি করতে হবে, কীভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে- সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ এবং সাধারণ কর্মীদের নিয়ে মাঝে মধ্যে মহড়া করার পরামর্শ দেন সরকারপ্রধান।
বিভিন্ন ঘটনায় অগ্নিনির্বাপণ কাজে ফায়ার ফাইটারদের দক্ষতা ও ত্যাগের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। বিভিন্ন সময় অগ্নি নিয়ন্ত্রণ এবং উদ্ধার কাজে অংশ নিতে গিয়ে নিহত ফায়ার ফাইটারদের কথা স্মরণ করেন তিনি।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সক্ষমতা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার একাডেমি’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
অত্যাধুনিক ও দক্ষ ফায়ার সার্ভিস সেবা নিশ্চিতে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দেশের অগ্নি ঝুঁকি ও অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবিলার পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বাহিনী আমাদের প্রয়োজন। ’
অর্থনীতি, অবকাঠামো, আর্ত-সামাজিক খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন প্রমুখ।