January 19, 2025
জাতীয়লেটেস্ট

‘অবাস্তব শর্তে’ জাতিসংঘকে রোহিঙ্গা স্থানান্তরে সম্পৃক্ত করা হয়নি

জাতিসংঘের (ইউএন) সংস্থাগুলোর অব্যাহত নেতিবাচক প্রচারণা, অবাস্তব শর্ত, অনড় অবস্থান ও অসহযোগিতার কারণে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় সংস্থাটিকে এ পর্যন্ত সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও আবাসনসহ অন্যান্য লজিস্টিকস সার্পোট দেয়া অব্যাহত রাখা হয়েছে। তবে জাতিসংঘসহ মানবিক সহায়তা প্রদানকারী অন্যান্য দাতা দেশ এবং সংস্থাগুলোকে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিতে সম্পৃক্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৭তম বৈঠকে এসব তথ্য জানানো হয়। ‘রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়ার সময় জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করা হয়নি’ এমন বিবৃতির জবাবে এসব কথা জানায় মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান জাগো নিউজকে বলেন, ভাসানচর নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে একটি প্রতিবেদন উত্থাপিত হয়েছে।

জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাগরে ভেসে থাকা ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে প্রথম নেয়ার পর গোলমাল বেধে যায়। তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সেখানে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে। আর তারা বড় একটা স্বপ্ন নিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এজন্য তারা ভাসানচরে থাকার বিষয়ে বিরোধিতা করে। তাই কক্সবাজার শিবিরে থাকা তাদের পরিবারের সঙ্গে মিলিয়ে দেয়ার জন্য বলেছে সংসদীয় কমিটি।

মুহাম্মদ ফারুক আরও বলেন, জাতিসংঘের দুই তিন মাস আগে যে অবস্থান ছিল গত দু’দিনে এর পরিবর্তন হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কথা হলো জোরপূর্বক নেয়া হলে তারা এখন বলে কেন তারা স্বেচ্ছায় গেছে এবং সেখানে ভালো আছে? এই সব কথার মূল উৎস হল ওই ৩০৬ জন। ওইসব রোহিঙ্গারা যখন গভীর সমুদ্রে মরার মত অবস্থায় ছিল তখন কিন্তু জাতিসংঘ এগিয়ে আসেনি। এমনকি অন্য কোনো দেশকেও বলেনি। তারা শুধু টেলিফোনে বলেছে আপনারা উদ্ধার করেন। আমরা উদ্ধার করে ওই লোকদেরকে ভাসানচরে নিয়ে রেখেছি।

তিনি বলেন, আমরা আশা করি জাতিসংঘ কক্সবাজারের শরণার্থীকেন্দ্রগুলোর মতো সেখানেও তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। কারণ, যারা ভাসানচরে গেছে তারা খুশি।

মন্ত্রণালয় থেকে বৈঠকে আরো জানানো হয়, ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের অন্যান্য মানবিক বিষয়ে সহায়তা দানের বিষয়ে এরইমধ্যে কক্সবাজারে কর্মরত ২২টি এনজিও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দ ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের উপর ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং জাতিসংঘ মিশনের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও ভাসানচরের বিষয়ে ইতিবাচক প্রচারণা তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সাময়িকভাবে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি আবাসস্থল গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশ অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

এর আগে ২ ডিসেম্বর জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামী দিনে কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা সম্পর্কে জাতিসংঘ অবগত আছে। কিন্তু শরণার্থীদের স্থানান্তর প্রস্তুতি কিংবা রোহিঙ্গাদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংস্থাটিকে যুক্ত করা হয়নি। এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে তথ্য খুবই কম আছে বলে জানানো হেয়েছে ওই বিবৃতিতে।

এরপর ৪ ডিসেম্বর মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাদের ভাসানচর নেয়া হয়। আর ভাসানচরে পৌঁছে অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

এর আগে অবৈধভাবে সাগর পথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় সাগর থেকে ৩০৬ জনকে উদ্ধার করে সেখানে রাখা হয়।

এদিকে সংসদ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বৈঠকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন ও তাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। আর যুক্তরাষ্ট্রে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের উপস্থাপিত কর্মপরিকল্পনায় কমিটির পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

বৈঠকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার সুপারিশ করে কমিটি।

সভাপতি ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, মো. আব্দুল মজিদ খান, নাহিম রাজ্জাক এবং কাজী নাবিল আহমেদ অংশ নেন।

বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *