অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা : জি এম কাদের
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
মহাজোটের শরিক হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টি একাদশ জাতীয় সংসদে কোন ভূমিকা নেবে তা এখনও চূড়ান্ত করতে পারেননি দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা। গতকাল বুধবার দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠক শেষে দলটির গতিপথ নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ওই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে এসে জি এম কাদের বলেন, সার্বিক রাজনৈতিক অবস্থা বুঝে আমরা ব্যবস্থা নেব। এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৫৯টি আসনে জিতেছে। তাদের জোটসঙ্গীদের মধ্যে জাতীয় পার্টি ২০টি এবং শরিক অন্য দলগুলো আটটি আসন পেয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সব মিলিয়ে সাতটি আসন পাওয়ায় তাদের সংসদে প্রধান বিরোধী দল হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। বিএনপি ও শরিকরা দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করলে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসন নেওয়ার পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রিসভাতেও ছিল।
পরস্পরবিরোধী ওই অবস্থানের কারণে জাতীয় পার্টি দশম সংসদে ‘গৃহপালিত বিরোধীদল’ আখ্যা পেয়েছিল। পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের কথাতেও তার স্বীকারোক্তি এসেছে বিভিন্ন সময়ে। গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল আসার পর থেকেই আলোচনা চলছে নতুন বিরোধী দল নিয়ে।
সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে বলা হয়েছে,সংসদের ‘বিরোধী দলীয় নেতা’ হবেন স্পিকারের বিবেচনামতে যিনি সংসদে ‘সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য নিয়ে গঠিত, ক্ষেত্রমতে দল বা অধিসঙ্গের নেতা’।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে জি এম কাদের বলেন, আমি মনে করি, আমরা এখনও মহাজোটের অংশ হিসেবে রয়েছি। ১৪ দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি। মহাজোটের স্বার্থে যেটা করতে হয় সেটাই করব।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনে নতুন এমপিদের শপথ অনুষ্ঠানের পর জাতীয় পার্টির পার্লামেন্টারি কমিটির বৈঠক হবে। সেখানেই জাপার সিধান্ত চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান কাদের। আর মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ জানান, তাদের পার্লামেন্টারি দলের নেতা কে হবেন তা পার্লামেন্টারি কমিটির বৈঠকে ঠিক করা হবে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পেয়েছিল ৩৪টি আসন। পার্টির সিনিয়র কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ হয়েছিলেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। আর চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত। জাতীয় পার্টি থেকে একজনকে মন্ত্রী এবং দুজনকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় পার্টি যে এবারও মন্ত্রিত্বের আশা ছাড়ছে না, সে বিষয়টি জি এম কাদেরের কথাতেই স্পষ্ট। সম্ভাবনার কথা বলা যায় না। সব রকম সম্ভাবনাই আছে। জাতীয় পার্টি সংসদে যাওয়ার পর কারা মন্ত্রিত্ব পাবেন, এ নিয়ে এখনও কিছু ঠিক হয়নি। আমরা এটা নিয়ে পরে মহাজোটের সঙ্গে আলোচনা করব।
জি এম কাদের বলেন, মহাজোটের সবচেয়ে বড় শরিক দল জাতীয় পার্টি ‘মহাজোটের স্বার্থেই’ কাজ করবে। এরশাদ এককভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে এলেও পরে আবার মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত দেওয়ায় জাতীয় পার্টির তৃণমূল কর্মীদের অনেকের মধ্যে রয়েছে হতাশা।
এবার লাঙ্গল মার্কায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের সমর্থক-কর্মীরা তাদের নির্বাচনী প্রচারণা করতে দেয়নি। ভোটের দিনও নানাভাবে বাধা দিয়েছেন। দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁও বিরোধী দলের ওপর ‘নিপীড়ন’ নিয়ে মুখ খোলেন মঙ্গলবারের এক সভায়। বুধবার সকালে যখন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করছিলেন, তখন ভবনের নিচে নেতাকর্মীরা ‘মন্ত্রিত্ব নয়, বিরোধী দল’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
পরে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জি এম কাদের বলেন, সংসদে অবশ্যই একটা শক্তিশালী বিরোধী দল দরকার। কিন্তু সরকার এখন এক শক্তিশালী অবস্থানে আছে। দুই একটি আসন বাদে সবগুলো আসনই তাদের। এতে জনগণের ইচ্ছারই প্রতিফলন হয়েছে।
এরশাদের ছোট ভাই কাদেরের ভাষায়, আদর্শের জায়গা থেকে অনেক কথা বলা যায়, কিন্তু থিওরিটিক্যাল কথা তো আর বাইরে বলা যাবে না। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক সামরিক শাসক এরশাদ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তার উত্তরসূরী হিসেবে ছোট ভাই কাদেরের নামই ঘোষণা করেছেন। তবে নিজেকে এখনও দলের শীর্ষ নেতা ভাবতে চান না কাদের।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ নিয়ে আসলে এখনও কথা বলার সময় আসেনি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে এরশাদ এদিন দলের ‘নীতি-নির্ধারণী’ সভায় আসেননি। সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদকেও পার্টি অফিসে দেখা যায়নি।রওশনের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তার জবাব দেননি জি এম কাদের বা রাঙ্গাঁ। ঢাকা-৬ আসন থেকে নির্বাচিত কাজী ফিরোজ, ঢাকা-৪ এর সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং কিশোরগঞ্জ-৩ এর মুজিবুল হক চুন্নু এদিন পার্টি অফিসে ছিলেন।