অবশেষে ‘কৃত্রিম পা’ পেল আরমান
* নূর ইসলাম ফরাজীর প্রচেষ্টা ও রোটারী ক্লাব অব খুলনা সাউথের সহযোগিতা
জয়নাল ফরাজী
অবশেষে আইফুল স্মৃতি সংঘের সভাপতি মো. নূর ইসলাম ফরাজীর প্রচেষ্টা ও রোটারী ক্লাব অব খুলনা সাউথ’র সহযোগিতায় কৃত্রিম পা প্রতিস্থাপনের সুযোগ পেলো নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রেললাইনে পা হারানো আরমান। গতকাল শুক্রবার রাতে নগরীর হোটেল ক্যাসল সালামে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তার কৃত্রিম পা প্রতিস্থাপন করে দেয় ‘রোটারী ক্লাব অব খুলনা সাউথ’। এর ফলে পা হারানোর প্রায় ৬-৭ বছর পর কৃত্রিম পায়ে চলার সুযোগ পেল পিতৃহারা দরিদ্র পরিবারের একমাত্র ছেলেটি।
জানা গেছে, ২০১১-১২ সালের দিকে প্রদীপন নামের এক এনজিও’র ময়লার গাড়ীর ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতো। পথশিশুদের সাথে সখ্যতার কারণে ছোট বেলা থেকে আসক্ত মাদকে। বিভিন্ন ধরনের ট্যাবলেট, সলিশন আঠা বা ড্যান্ডি, সিরিঞ্জের মাধ্যমে প্যাথেডিন ইত্যাদি গ্রহণ করেছে সে। একবার তার মায়ের সাথে ঝগড়া করে বাসা থেকে বের হয়ে গিয়ে ড্যান্ডি গ্রহণ করে ট্রেনে করে চুয়াডাঙ্গা যাওয়ার পথে নেশাগ্রস্ত হয়ে ট্রেনের চাকার পাশে অচেতন হয়ে থাকে। হঠাৎ সে সেখান থেকে পড়ে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে তার বাম পায়ের হাটু পর্যন্ত। পড়ে জ্ঞান ফিরলে সে নিজেকে একটি ক্লিনিকে আবিস্কার করে। তার এই ভয়াবহতার কথা তুলে ধরে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে খুলনার দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন পত্রিকার মাদক বিরোধী প্রতিবেদন ‘মাদক সমাচার-৮’ এ প্রকাশিত হয় ড্যান্ডিতে আসক্ত হয়ে নিজের পা হারানো আরমানের বাস্তব জীবনের কথা।
সংসার বলতে সে ও তার মা নাজমা বেগম। ছোট বেলা থেকে সংসারের অভাব-অনটনে পথশিশুদের সাথে তার বেড়ে ওঠা। দুর্বিষহ জীবন কাটানো ছেলেটি নিজের পায়ে দাঁড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠে। কিন্তু কৃত্রিম পা সংযোজনে যে খরচ হবে তা তার পক্ষে জোগাড় করা একেবারে অসম্ভব বলে এ প্রতিবেদকে জানায়। ২০১৭ সালে আবারও মাদকের আগ্রাসন নামক এ ধারাবাহিক প্রতিবেদনে তার ওই সময়কার কষ্টের কথা তুলে ধরা হয়।
তখন আরমান জানিয়েছিলো, পঙ্গু হওয়ার পর সে ঠিকমত কোন কাজ করতে পারে না। পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী তার মা নাজমা বেগমের উপার্জিত অর্থেই তাদের সংসার চলছে। মায়ের কষ্ট আর সহ্য হয় না। তাই একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলেছে। ওই চিকিৎসক বলেছে কৃত্রিম পা প্রতিস্থাপন করে কিছুটা স্বাভাবিকভাবে হাটা-চলা করতে পারবে। তাই সমাজের বিত্তবান লোকদের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন। এ খবর প্রকাশের পর নগরীর সোনাডাঙ্গা আইফুল স্মৃতি সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. নূর ইসলাম ফরাজী ওই ছেলেটির কৃত্রিম পা প্রতিস্থাপনের জন্য চেষ্টা চালায়। তিনি নিজে কিছু বুঝতে না পেরে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ওই সময়কার সহ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা রোটারিয়ান মোল্লা মারুফ রশীদকে অবহিত করেন। তখন মোল্লা মারুফ রশীদের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতায় রোটারী ক্লাব অব খুলনা সাউথে লিখিত আবেদন করেন। তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে অসহায় এ ছেলেটির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এ সংগঠনটি। তাদের সহযোগিতার ফলে পিতৃহীন ছেলেটি পেল আবারও হাটা-চলার সুযোগ।
এ বিষয়ে আইফুল স্মৃতি সংঘের সভাপতি নূর ইসলাম ফরাজী বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা ও রোটারিয়ান মারুফ রশীদ সাহেবের পরামর্শ এবং রোটারী ক্লাব অব খুলনা সাউথের সহযোগিতায় ছেলেটি কৃত্রিম পা পেয়েছে। অসহায় এ ছেলেটির জন্য কিছু করতে পেরে ভালই লাগছে। মাদকে আক্রান্ত ছেলেটি ভয়াবহতা বুঝতে পেরে এ পথ থেকে ফিরে এসেছে বলে আমাকে জানিয়েছে।’