অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজড প্রকল্প ও আধুনিক ভূমি ভবনসহ বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) ভূমি ভবন, উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবন, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ কার্যক্রম এবং ভূমি তথ্য ব্যাংক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি তার সরকারের আধুনিক ভূমি ব্যবস্থাপনা, ই-মিউটেশনে সহজেই খতিয়ান প্রদান, অনলাইনে ভূমিকর পরিশোধ ও দাখিলা প্রদান, এক ছাদের নিচে ভূমির সবসেবা কার্যক্রম তুলে ধরে অন্যান্য সরকারের সমালোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতার সরকারের ১৩ জানুয়ারির কেবিনেট সভায় তিনি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা ছিল যুগান্তকারী। তিনি যত সার্টিফিকেট মামলা ছিল কৃষকদের বিরুদ্ধে, সব মামলা প্রত্যাহার করে নেন। ভূমিকর যারা দিতে পারেননি, মাফ করে দেন। সেই সঙ্গে ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করে দেন। মানুষের যে অধিকার, সেই অধিকার নিশ্চিত করার জন্য, এটা একটা পদক্ষেপ ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) আরেকটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, একজন মানুষের নামে কত জমি থাকবে? তিনি একশ বিঘার একটি সিলিংও করে দিয়েছিলেন। জাতির পিতার একটাই লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশের মানুষের অন্ন, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। ভূমিহীন মানুষের জন্য তিনি গৃহনির্মাণের পদক্ষেপ নেন, গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প নেন এবং খাসজমি ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণ শুরু করেন।
এদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যেমন খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, তেমনি প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ শয্যার একটি করে হাসপাতাল করে মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন। ড. কুদরত-এ খোদার নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন করে দেন।
সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতার আকাঙ্খা ছিল যে, একটা দেশকে তিনি গড়ে তুলবেন। সেটা তিনি করতে পারেননি। একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করে উন্নতির পথে নিয়ে যান। তখনই সপরিবারে তাকে হত্যা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখেছি- শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বের সব যায়গায় যখন অপরিকল্পিত নগরায়ন হয়; একদিকে, আমরা কৃষি জমি হারাই। অপরদিকে বনায়ন ধ্বংস হয়, পরিবেশ নষ্ট হয়। এটা খুব একটা স্বাভাবিক নিয়মই ছিল। কিন্তু আমরা সরকারে আসার পর থেকে আমাদের প্রচেষ্টাই ছিল- ভূমি ব্যবহার, ভূমি উন্নয়ন এবং ভূমিকে যথাযথভাবে রক্ষা করা। কৃষি জমি রক্ষা করা আবার মানুষের বসতিটা সুন্দরভাবে গড়ে তোলা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে তাদের রক্ষা করা, এসব বিষয় চিন্তা করে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিই। ভূমি নীতিমালা অর্থাৎ ভূমি ব্যবহারের জন্য যে একটা নীতিমালা প্রয়োজন আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত করেছিলাম। ২০০১ সালে সে ধরনের একটা নীতিমালাও প্রণয়ন করি। ’৯৬ আমলে ২৮টি মৌলিক পদক্ষেপ নিই এবং জাতীয় ভূমি ব্যবহার কমিটি গঠন করেছিলাম।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় দফায় ২০০৯ এ সরকারে এসে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের ঘোষণা ছিল। সেই দিকে লক্ষ্য রেখে আমরা নানা পদক্ষেপ নিই। ভূমি ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করে মানুষের সেবা দেওয়া এবং মানুষের অধিকার সুরক্ষিত করার ব্যবস্থা করেছিলাম। ২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে অনেকগুলো নির্দেশনা দিয়েছিলাম। আমি ধন্যবাদ জানাই, আপনারা সেই নির্দেশনাগুলো এক এক করে পালন করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ভূমি সেবাটা মানুষের জন্য সহজ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করেছেন।
ই-মিউটেশন আর ভার্চুয়াল রেকর্ডরুমে সহজেই পাওয়া যাবে খতিয়ান
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য- শতভাগ ই-মিউটেশন কার্যক্রম যেন সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা যাতে সম্পূর্ণভাবে ডিজিটালাইজড হয়, সে ব্যবস্থা আমরা হাতে নিই। মানুষ যেন অযথা হয়রানি না হয়। মানুষকে যেন ভোগান্তির শিকার না হতে হয়। দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াতে না হয়। ভূমি সেবাটা যেন হাতের মুঠোয় হয়। সে ব্যবস্থাটাই আমরা করতে চেয়েছি। এসব নিশ্চিত করতে অনলাইনে খতিয়ান সংগ্রহ, উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর, অনলাইন ডাটাবেজসহ ভূমি সেবার সব ক্ষেত্রে অধিকতর ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ই-মিউটেশন বাস্তবায়নের স্বীকৃতি স্বরূপ ভূমি মন্ত্রণালয় জাতিসংঘের ‘ইউনাইটেড ন্যাশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ অর্জন করেছে। জাতিসংঘের পুরস্কার বাংলাদেশে এই প্রথম। এই স্বীকৃতি ডিজিটাল বাংলাদেশের গড়ার প্রত্যয়কে আরও গতিশীল করেছে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ভূমি ব্যবস্থাপনাটাকে আরও উন্নত করতে চাই। সেই সঙ্গে আমরা জানি যে, সারাদেশের ভূমি অফিসের যে জীর্ণ দশা, অনেক সময় ঠিকমতো কাজ করা যেত না। সেই জীর্ণদশা কেন আমরা জানি না। আমাদের আগে অনেকে তো ক্ষমতায় এসেছে, কেন এ বিষয়ে কোনো সংস্কার করা হয়নি? আমরা প্রথম সরকারে এসে কিছু ব্যবস্থা নিই। পরবর্তীতে আবারও নিই। কিন্তু আরও দুর্ভাগ্যের বিষয়, বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৩ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকগুলো ভূমি অফিস আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। তখন একটা ঘোষণা দিয়েছিলাম, যারা এই ভূমি অফিস পোড়াচ্ছে, তাদের যেন আর কোনোদিন জমির মালিকানা না থাকে। কারণ তারা তো আগুন দিয়ে জমির রেকর্ড পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আর পাবে কেন? এই হুমকি দেওয়ার পর ভূমি অফিস পোড়ানো বন্ধ হয়।
তিনি বলেন, আসলে বিএনপি-জামায়াত তো আর মানুষের জন্য কাজ করে না। মানুষের প্রতি, দেশের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ নেই। ক্ষমতা আর ক্ষমতায় থেকে টাকা বানানো আর জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস দুর্নীতি, এগুলোই তাদের কাজ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদায়ন করা হয়েছে। তাদের যানবাহন দেওয়া হয়েছে। তারা জনগণকে সেবাও দিতে পারছে। অনলাইনে খতিয়ান সংগ্রহ সিস্টেম বাস্তবায়ন হচ্ছে। সারাদেশে প্রায় চার কোটি ৯২ লাখ ডিজিটালাইজড খতিয়ান নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ভার্চুয়াল রেকর্ড রুম। এখান থেকে বিনা পয়সায় যে কেউ তার খতিয়ান পাবে।
তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি। এখানেই আমরা থেমে থাকবো না, আমরা উন্নত দেশ গড়তে চাই। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে সেই পরিকল্পনাও আমরা হাতে নিয়েছি। আমরা এখন অষ্টম পাঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছি। এতে ভূমি ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দিয়েছি। এখানে ভূমি প্রশাসন শক্তিশালী করতে ব্যবস্থা নিয়েছি। ভূমি প্রশাসনে উন্নয়নের কৌশল হিসেবে ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশনের ওপর জোর দিয়েছি।
সরকারপ্রধান বলেন, ভূমি ব্যবস্থাকে উন্নত ও বিশ্বমানের করার লক্ষ্যে ডিজিটালাইজেশনের তিনটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে- ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালনা ও সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ প্রকল্প এবং মৌজা ও প্লটভিত্তিক ভূমি জোনিং প্রকল্প। এটা বাস্তবায়ন হলে ভূমি ব্যবস্থাপনার আমূল পরিবর্তন আসবে। মানুষও প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার সেবা পাবে।