অনুর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে ভারতের কাছে হেরে রানার্স আপ বাংলাদেশের যুবারা
ক্রীড়া ডেস্ক
১০৭ রানের ছোট্ট লক্ষ্য। সেটির পেছনে ছুটেই থরহরি কম্প অবস্থা! বোলারদের সাজানো মঞ্চে ব্যাটসম্যানরা হয়ে উঠলেন আত্মঘাতী। স্বপ্ন হয়ে গেল ফিকে। শেষ দিকে নবম জুটির দৃঢ়তায় আবার ফিরল আশা। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। বাংলাদেশের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে যুব এশিয়া কাপের শিরোপা ধরে রাখল ভারত। প্রথমবার ফাইনালে ওঠা বাংলাদেশ হারাল প্রথম শিরোপা জয়ের সুবর্ণ সুযোগ। ৫ রানের জয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হলো ভারত।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ফাইনালে শনিবার দুর্দান্ত বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে ভারতকে ১০৬ রানেই গুটিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের যুবারা। কিন্তু ব্যাটিং হলো ভীষণ হতাশার। ভারতের বোলিংও হলো দারুণ। বাংলাদেশ শেষ তাই ১০১ রানেই।
৫ উইকেট নিয়ে ভারতের জয়ের নায়ক বাঁহাতি স্পিনার অথর্ব আনকোলেকার। এই নিয়ে যুব এশিয়া কাপের আট আসরের সাতটিতেই শিরোপা জিতল ভারত। কেবল ২০১৭ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আফগানিস্তান।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার পাশাপাশি দায় কিছুটা আছে বাজে আম্পায়ারিংয়েরও। নবম জুটির দৃঢ়তায় যখন জয়ের কাছাকাছি এগিয়েছে বাংলাদেশ, আম্পায়ারের দৃষ্টিকটু ভুলে এলবিডব্লিউ হন তানজিম হাসান সাকিব। ইনিংসের শুরুতেও ওপেনার তানজিদ হাসানকে দেওয়া এলবিডব্লিউয়ের সিদ্ধান্ত ছিল ভীষণ সংশয়পূর্ণ।
দিনশেষে যদিও দায়টা নিজেদেরই নিতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। ১০৭ রান তাড়ায় আম্পায়ারিং সিদ্ধান্তের দিকে আঙুল তোলার অবস্থা হবেই বা কেন! অথচ বোলিং-ফিল্ডিংয়ে যা করেছে দল, তার চেয়ে বেশি কিছু চাওয়া কঠিন। দুই দলের স্কোর যা বলছে, উইকেট মোটেও ততটা ব্যাটিং প্রতিকূল ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশের বোলিং ছিল দুর্দান্ত।
টস হেরে বোলিংয়ে নামা দল নতুন বলে কাঁপিয়ে দেয় ভারতেক। দারুণ মুভমেন্ট ও বাউন্সের প্রদর্শনীতে দুই পেসার তানজিম ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি শুরুতেই দলকে এনে দেন দুই উইকেট। এরপর তানজিদের দুর্দান্ত সারাসরি থ্রোয়ে যখন ফিরলেন আরেক ব্যাটসম্যান, ভারতের রান তখন ৩ উইকেটে ৮।
চতুর্থ উইকেটে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন অধিনায়ক ধ্র“ব জুরেল ও শাশ্বত রাওয়াত। ৪৫ রানের এই জুটি ভাঙেন শামিম হোসেন। ফিরিয়ে দেন ১৯ রান করা রাওয়াতকে। ওই ওভারেই শামিম এনে দেন আরেকটি উইকেট।
পরে এক প্রান্ত আগলে রাখা জুরেলকেও ফেরান শামিম। পয়েন্টে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন মৃত্যুঞ্জয়। ভারতীয় অধিনায়ক করেছেন ৫৭ বলে ৩৩। মৃত্যুঞ্জয় পরে পুরোনো বলে এসেও করেছেন দারুণ বোলিং। ভারত ৮৪ রানে হারিয়েছিল ৯ উইকেট। আটে নামা কারান লালের ৪৩ বলে ৩৭ রানের ইনিংসে তারা পেরোয় একশ।
কারানকে ফিরিয়েই ইনিংস শেষ করেন মৃত্যুঞ্জয়। ৩ উইকেট নেন তিনি ১৮ রানে। তবে বাংলাদেশের সফলতম বোলার ছিলেন শামিম। মূলত ব্যাটসম্যান হলেও অফ স্পিনে ৬ ওভারে ৮ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট।
শিরোপার সুবাস নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশকে এলোমেলো করে দেন ভারতের বাঁহাতি পেসার আকাশ সিং। গতির সঙ্গে দারুণ সুইংয়ে ভোগান টপ অর্ডারকে। প্রথম ওভারেই তানজিদকে ফিরিয়ে শুরু। যদিও রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে, বল পরিষ্কার চলে যেত লেগ স্টাম্পের বাইরে।
মাহমুদুল হাসান আকাশকে উইকেট দিয়ে আসেন অনেক বাইরের বল তাড়া করে। বাংলাদেশের বড় ভরসা তৌহিদ হৃদয় বোল্ড হন ভেতরে ঢোকা অসাধারণ এক ডেলিভারিতে। আরেক পাশে ডানহাতি পেসার বিদ্যাধর পাতিলের বলে জঘন্য এক শটে বিদায় নেন পারভেজ হোসেন। পঞ্চম ওভারেই বাংলাদেশ হারায় চতুর্থ উইকেট। পেসারদের পর শুরু হয় ভারতীয় স্পিনের ছোবল। অর্থব ফিরিয়ে দেন শাহাদাত ও শামিমকে। ৬১ রানে বাংলাদেশ হারায় ষষ্ঠ উইকেট।
সেখান থেকে দলকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক আকবর আলি ও মৃত্যুঞ্জয়। এই জুটির সময় মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশ আছে পথেই। আকবর খেলছিলেন দারুণ। কিন্তু বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকে কিছুক্ষণ। তাতেই যেন কেটে যায় ছন্দ। বিরতির পরপরই অথর্বকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ২৩ রানে ফেরেন আকবর।
অধিনায়ককে হারিয়েও সতর্ক হননি মৃত্যুঞ্জয়। ২ চার ও ১ ছক্কায় ২১ রান করা ব্যাটসম্যান ফিরলেন প্রতিপক্ষকে উইকেট উপহার দিয়ে। বাংলাদেশ তখন ৮ উইকেটে ৭৮। মিইয়ে যাওয়া আশা আবার প্রাণ পায় নবম জুটিতে। রকিবুল হাসান ও তানজিম একটু একটু করে এগিয়ে নেন দলকে। কোনো ঝুঁকি না নিয়ে, এক-দুই করে কাক্সিক্ষত ঠিকানার পথে রাখেন দুজন।
জয় যখন কেবল ৬ রান দূরে, তখনই আম্পায়ারের ওই সিদ্ধান্ত। তানজিমের ব্যাটে বেশ ভালোভাবে লাগার পরও দিলেন এলবিডব্লিউ। তিন বল পরই শেষ ব্যাটসম্যান শাহিন আলমকে দারুণ এক আর্ম ডেলিভারিতে বোল্ড করে দিলেন অথর্ব। বাংলাদেশের যুবাদের নতমুখের সামনে আনন্দ নৃত্যে মেতে উঠলেন ভারতীয় যুবারা।