‘অনিয়ম’ পেয়ে এবার সাহাবুদ্দিন মেডিকেল বন্ধ করল র্যাব
করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া সনদ দেওয়াসহ নানা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে ঢাকার গুলশানের সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে র্যাব।
রোববার বিকালে ওই হাসপাতালে অভিযানে যায় র্যাব। হাসপাতালটির সহকারী পরিচালক ডা.আবুল হাসনাতকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
রাতে অভিযান শেষে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ বলেন, তারা হাসপাতালটি বন্ধ করে দিচ্ছেন।
“আমাদের অভিযান রাত ১১টার দিকে শেষ হয়েছে। এখন মামলার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত গোছানো হচ্ছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তা সিলগালা করবেন।”
কখন সিলগালা করা হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোগী সরিয়ে নেওয়ার পর সিলগালা করে দেওয়া হবে।
অভিযানের সময় র্যাব সহকারী পরিচালক আবুল হাসনাতের পাশাপাশি স্টোর কিপার শাহরিজ কবিরকে ধরে র্যাব-১ কার্যালয়ে নিয়ে যায়।
হাসপাতালটির বিরুদ্ধে ৯ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে জানান র্যাবের পরিচালক আশিক।
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাস পরীক্ষায় সরকার কর্তৃক র্যাপিড টেস্টের অনুমোদন না থাকলেও তারা সেটা করেছে। পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া প্রতিবেদন দিয়েছে, করোনাভাইরাস নেগেটিভ রোগীকে পজিটিভ দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছে, ভিন্ন ল্যাব থেকে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করিয়ে নিজেদের প্যাডে প্রতিবেদন দিয়েছে।
হাসপাতালটির লাইসেন্স এক বছর আগে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তা নবায়ন করা হয়নি বলেও র্যাবের অভিযোগ।
এছাড়া হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে ১০ বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল সামগ্রী-ওষুধ পাওয়ার কথাও জানিয়েছে র্যাব।
৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে এখন কত রোগী রয়েছে, তা জানা যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বিকাল থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে র্যাবের অভিযান শেষে তিনি বলেন, রাতে রোগী থাকা অবস্থায় এভাবে হাসপাতাল বন্ধ করা ঠিক হয়নি।
আর চিকিৎসককে গ্রেপ্তারের নিন্দাও জানান তিনি।
সাহাবুদ্দিন এক সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি ছিলেন। তবে ২০১৯ সালে তিনি পদত্যাগ করে বিএনপি ছাড়েন।
অনুমোদন না নিয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার অভিযোগ পেয়ে রোববার ঢাকার গুলশানের সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে সহকারী পরিচালক আবুল হাসনাতকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবুল হাসনাত আটকের সময় সাংবাদিকদের বলেন, যারা প্লাজমা দিচ্ছেন, শুধু তাদের নিয়ে কাজ করেছিলেন তারা। আর গণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের র্যাপিড টেস্ট কিট তারা নিজেরাই এনে পরীক্ষামূলক ব্যবহার করছিলেন।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া র্যাবের নির্বাহী হকিম সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, “তারা অন্য ল্যাব থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনা ফলাফল নিজেদের প্যাডে দিয়েছে, যা আইন বহির্ভূত।
“এছাড়াও রয়েছে আরও অনেক অভিযোগ। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হচ্ছে।”
র্যাব পরিচালক আশিক বিল্লাহ বলেন, “হাসপাতালটিতে যে সব রোগী আছেন, তারা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। তারা চলে যাওয়ার পর সিলগালা করে দেওয়া হবে।”
এছাড়া প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি গুছিয়ে মামলা করাও প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে এর আগে রিজেন্ট হাসপাতাল বন্ধ করেছিল র্যাব। ওই হাসপাতালের মালিক মোহাম্মদ সাহেদকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
অনুমোদন না নিয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার অভিযোগে রোববার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে গুলশানের সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালায় র্যাব।
অভিযোগের বিষয়ে সাহাবুদ্দিন বলেন, যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার সবটাই ঠিক নয়। আর র্যাব তাদের কাছে থাকা প্রয়োজনীয় কাগজ দেখেনি।
সরকারের অনুমোদন ছাড়া র্যাপিড টেস্টের বিষয়ে তিনি বলেন, “জীবন রক্ষার্থে ডাক্তাররা অনেক কিছু করে থাকেন। সেরকম কিছু হলে আইনিভাবে বিচার হবে।”
লাইসেন্স নবায়ন না করার প্রসঙ্গে সাহাবুদ্দিন বলেন, “করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে লাইসেন্স নবায়নের জন্য জমা দিতে একটু দেরি হয়েছে।”
অভিযানে র্যাব যে সব অভিযোগ এনেছে, সে সব বিষয়ে তিনি বলেন, “তদন্ত করলেই সব বের হবে। প্রয়োজনে শাস্তি মাথা পেতে নেব।”
রাত পর্যন্ত হাসপাতালে রোগী ছিল জানিয়ে সাহাবুদ্দিন বলেন, “সকালে কী হবে, বুঝতে পারছি না।”
তিনি বলেন, “আমি নিজে জেলে যেতে রাজি আছি। অভিযানের পর থেকে কোথাও পালিয়ে যাইনি। অফিসেই আছি। তবে যেভাবে ডাক্তারকে ধরে নেওয়া হয়েছে, তা ঠিক হয়নি। তার নিন্দা জানাচ্ছি।”
“এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত সেবামূলক। আমার সমস্ত অর্জন শেষ হয়ে গেল,” বলেন তিনি।