September 17, 2024
আঞ্চলিক

অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে ভোমরা স্থল বন্দরে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

শ্রমিক সরবরাহ সংকটে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরে পণ্য খালাস ও অন্যান্য বিষয়ে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। অবিলম্বে তাদের দাবি পুরণ না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

গতকাল রোববার দুপুরে ভোমরা স্থলবন্দর চত্বরে আয়োজিত এই মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে পূর্ব সাক্ষরিত চুক্তি মোতাবেক ভারতীয় আমদানি পণ্য খালাসে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিক সরবরাহের কথা। এজন্য টন প্রতি প্রায় ৫৫ টাকা গ্রহন করা হলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ  নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিক সরবরাহ করছেন না। তারা জানান প্রতিদিন  ভারতীয় পণ্যবাহী গড়ে ৪০০ ট্রাক থেকে এই হিসাবে আদায়কৃত প্রায় ৬ লাখ টাকা নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে। অভিযোগ করে তারা আরও বলেন কর্তৃপক্ষ শ্রমিক সরবরাহ করতে না পারায় নিরুপায় হয়ে ব্যবসায়ীরা গাড়ি প্রতি বাড়তি দুই হাজার টাকা ব্যয় করে শ্রমিক জনবল কিনছেন। এই হিসাব দিয়ে তারা আরও বলেন প্রতিমাসে গড়ে ১৮ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। অথচ বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের সেবা দিচ্ছেন না।

মানববন্ধনে তারা আরও বলেন, ভারতীয় পণ্যবাহী গাড়ি ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করে পণ্য খালাস শেষে  সন্ধ্যার পরই ফিরে গেলেও প্রতিটি ট্রাক থেকে প্রায় দেড় হাজার টাকা নাইট চার্জ আদায় করা হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশের কোনো বন্দরে শ্রমিক জনবল নিয়োগে দুই বার টাকা ব্যয় এবং রাতে অবস্থান না করে নাইট চার্জ কর্তন করা হয় না বলে উল্লেখ করেন তারা।  অন্যদিকে ভোমরা বন্দরে প্রতিবছর ৫ শতাংশ ট্যারিফ বৃদ্ধিরও  প্রতিবাদ করেন তারা।

মানববন্ধনে এসব অভিযোগ তুলে ধরে বক্তারা বলেন এসব অনিয়মের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যবসায়ীরা ভোমরা বন্দর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এতে এই বন্দরে রাজস্ব আয় কমতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ী নেতারা মানববন্ধনে বলেন ঢাকা থেকে কলকাতার দুরত্ব কম হওয়ায় সকল আমদানিকৃত পন্য পচনশীলতা এবং অধিক মূল্য থেকে রক্ষা পায়। এজন্য ব্যবসায়ীরা এই বন্দরে ব্যবসা করতে  স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলেও অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে তারা ভোমরা বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

বক্তারা আরও বলেন, শ্রমিক নিয়োগে দুইবার টাকা দেওয়া, রাত্রি যাপন না করলেও নাইট চার্জ এবং ট্যারিফ বৃদ্ধি বন্ধ না করা হলে তারা বৃহত্তর  আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবেন।

এ বিষয়ে জানতে ভোমরা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক মো. রেজাঊল করিমের কাছে বারবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে সহকারি পরিচালক মাহমুদুল হাসান বাপী বলেন ‘সাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী আমরা শ্রমিক জনবল সরবরাহ দেখভাল করে থাকি। চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিক সরবরাহ করা হলেও কিছু ব্যবসায়ী পণ্য খালাস অন্য কোথাও করাতে চাওয়ায় শ্রমিকরা আপত্তি জানান। এছাড়া সন্ধ্যা ৬ টার পর কোনো ভারতীয় পন্য খালাস করা হলে সরকারের আইন  অনুযায়ী  ট্রাকগুলি নাইট চার্জ দিতে বাধ্য। সবকিছু সরকারি নিয়ম অনুযায়ী করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি এইচ এম আরাফাতের সভাপতিত্বে দুই ঘন্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক সভাপতি আশরাফুজ্জামান আশু, জেলা শিল্প ও বনিক সমিতির সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু, সিঅ্যান্ড এফ অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম, আবু মুসা, রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, গোলাম ফারুক বাবু, মনিরুল ইসলাম মিনি, মিজানুর রহমান, পরিতোষ ঘোষ, মিলন, ডা. আক্তারুজ্জামান প্রমূখ ব্যবসায়ী নেতা।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *