অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে ট্রেইনি চিকিৎসকরা
মাসিক ভাতা ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করার দাবিতে কর্মবিরতিতে পোস্টগ্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান ধর্মঘট থেকে এ ঘোষণা দেওয়ার পর আজ রোববার ধর্মঘট ও কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন বলেন, আমরা গত ছয় মাস ধরে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ এবং পেশাদার সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করছি। কিন্তু আমরা কোনো সন্তোষজনক সাড়া পাইনি। সরকার আমাদের ভাতা বাড়ানোর গেজেট জারি না করা পর্যন্ত আমরা আমাদের কর্মবিরতি চালিয়ে যাবো।
আয়োজকরা আরও জানান, বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় সাড়ে ৮ হাজার চিকিৎসক আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।
এফসিপিএস, এমডি, এমএস ডিপ্লোমা কোর্সের ডিগ্রিধারী এ চিকিৎসকরা ২০ হাজার টাকা মাসিক ভাতা পান। তাদের দাবি, সরকারি অন্য পেশার লোকজন অনেক বেশি বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু চিকিৎসকরা অবহেলার শিকার। তাদের নামে যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা অপ্রতুল। এ কারণে তাদের ভাতা ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার দাবি জানাচ্ছেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা।
পোস্টগ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ডাক্তারদের উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য দুই থেকে পাঁচ বছরের জন্য একটি নির্দিষ্ট চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরো বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। তাদের সরাসরি রোগীর সেবা দেওয়া, বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করা এবং তাদের ক্লিনিক্যাল দক্ষতা অর্জন করতে হয়। তাদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার অনুমতি দেওয় হয় না এবং তাদের সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করতে হয়।
পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে ২০ হাজার টাকায় একজন চিকিৎসকের চলা খুবই কষ্টকর। দীর্ঘ ছয় মাস সংশ্লিষ্টদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে আজ আমরা বাধ্য হয়েই বাংলাদেশের সব পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকরা কর্মবিরতি শুরু করেছি। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে ভারতে ট্রেইনি চিকিৎসকদের ভাতা দেওয়া হয় ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা এবং পাকিস্তানে দেওয়া হয় ৫০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকা। আর উন্নত দেশগুলোর পরিসংখ্যান বলার অপেক্ষা রাখে না।
তিনি বলেন, মাসিক ভাতা ৫০ হাজার টাকা করার দাবিতে আজ থেকে আমাদের কর্মবিরতি এবং ধর্মঘট শুরু হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলবে। প্রজ্ঞাপন প্রকাশ না করা পর্যন্ত আমরা কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাব না। এ দাবি আদায়ে আমরা প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
দাবি পূরণ করে দ্রুত রোগীদের সেবায় ফিরতে চান বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা জানি শুধু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দিয়ে হাসপাতাল চালানো খুবই কষ্টকর। এতে সাধারণ মানুষ ও সেবাপ্রত্যাশীদের ভোগান্তি বাড়বে। আমরা চাই না তা হোক, আমরা চাই আমাদের এ অধিকার নিয়ে রোগীদের সেবায় দ্রুত ফিরতে।
আন্দোলনকারীরা জানান, সারা বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রায় ১০ হাজার ট্রেইনি চিকিৎসক রয়েছেন। সবাই একযোগে এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।
লুৎফর রহমান, ঢাকা প্রতিনিধি