January 20, 2025
জাতীয়

অধিক উচ্চতার জোয়ারে দুর্ভোগ কাটছে না উপকূলে

এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অধিক উচ্চতার জোয়ারে উপকূলের জনজীবন বিপর্যস্ত। কারো পুকুর ভেসে গেছে, কারো ঘের, অনেকের বাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি।

এমনকি উপকূলীয় শহরগুলোতে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে দুর্ভোগের কোনো শেষ নেই।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ২ ফুট অধিক উচ্চতার জোয়ার এবং তার সঙ্গে ভারী বর্ষণের কারণে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। আর অনেক জায়গায় জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেঙে ডুবে গেছে সবকিছু।

উপকূলীয় জেলাগুলো থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে বরিশাল, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা, বরগুণা, ভোলা, পিরোজপুর, নোয়াখালী, ঝালকাঠি, বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

বাংলানিউজের বাগেরহাট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, প্রতিদিন দুই বেলা করে জোয়ারের পানিতে ডুবছে শতাধিক গ্রাম। এলাকার মানুষের মাছের ঘের, গোয়ালঘর, পুকুর ভেসে গেছে। একাকার হয়ে গেছে মাঠ ও লোকালয়। শুধু চরাঞ্চণের গ্রাম নয়, সদর উপজেলার মাঝিডাঙ্গা, ভদ্রপাড়াসহ অন্তত পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মোরেলগঞ্জের নিশানবাড়িয়া, বহরবুনিয়া, জিউধরা ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম, পৌর শহর, ঢুলিগাতি, তেলিগাতি, সানকিভাঙ্গাসহ অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে জনগণ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে এসব এলাকার মৎস্য ঘের।

ভোলা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রিয়াজউদ্দিন বলেন, জোয়ারের পানি সাড়ে ৫শ’ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। পনি কমে গেলে পরবর্তীতে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হতে পারে।

এদিকে জোয়ারের পানিতে ইলিশা ইউনিয়নের কাঁচা-পাকা রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকাবাসী।

শুধু তাই নয়, দুর্গত এলাকায় এখন খাদ্য ও বিশুদ্ধ সংকট। জোয়ারের পানিতে বানভাসি এলাকা যেন মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। কিছুতেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বানভাসি মানুষ।

বরগুনা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বলেশ্বর ও বিষখালী নদী ঘেঁষা পাথরঘাটার পদ্মা গ্রাম। এ গ্রামের পাশেই পদ্মাবাঁধ। এ বাঁধের উপরে রয়েছে অসংখ্য ভূমিহীন মানুষের বসবাস। কিন্তু গত কয়েকদিনে অমাবস্যার জোয়ারের পানিতে পদ্মা বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তাদের মধ্যে যেমন আতঙ্ক বিরাজ করছে, তেমনি বসতঘরসহ ভিটে-মাটি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

পাথরঘাটা উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, পদ্মা বেড়িবাঁধ ভাঙন এলাকায় পরিদর্শন করা হয়েছে। বাঁধটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া বাঁধের উপরে বসবাসকারীরাও রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। আপাতত বাঁধটি মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, এখনো অধিক উচ্চতায় জোয়ারের শঙ্কা কাটেনি। সাগরে ঝড়ো হাওয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে। আমরা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিমাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১-২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছি।

ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার শঙ্কায় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেতও বহাল রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারকে বলা হয়েছে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে। এছাড়া দেশের নদীবন্দগুলোকেও এক (১) নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

অন্য এক পূর্বাভাসে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় থাকায় সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়ার সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।

রোববার দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ডিমলায়, ১০০ মিলিমিটার। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। তবে রাতের তাপমাত্রা কমবে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *