সৌদি আরবের সঙ্গে দুই চুক্তি ও চার সমঝোতা স্মারক সই
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
বিদ্যুৎ ও জনশক্তিসহ কয়েকটি খাতে বিনিয়োগের জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে দুটি চুক্তি ও চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে; যার মাধমে দেশে বড় ধরনের বিদেশি বিনিয়োগ আসবে আসবে আশা করা হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তার কার্যালয়ে সৌদি প্রতিনিধিদের সঙ্গে এসব চুক্তি ও সমঝোতায় সই করেন বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানি ও সংস্থার প্রতিনিধিরা। চুক্তি সইয়ের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন সৌদি আরবের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক মন্ত্রী মাজিদ বিন আবদুলাহ আল কাসাভি এবং অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন মাজিদ আল-তাওজরি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম পরে সাংবাদিকদের বলেন, সৌদি বাদশাহ বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে আগ্রহী বলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মন্ত্রী মাজিদ বৈঠকে জানান। সৌদি আরবের ৩৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে বুধবার রাতে ঢাকায় পৌঁছান দেশটির দুই মন্ত্রী।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, সৌদি প্রতিনিধি দলের এই সফরে অন্তত ১৬টি প্রকল্পে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ আসবে বলে তারা আশা করছেন।
চুক্তি ও সমঝোতা : # ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র (সোলার আইপিপি) নির্মাণে সৌদি আরবের আলফানার কোম্পানির সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি)।
ইজিসিবির পক্ষে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অরুণ কুমার সাহা এবং আলফানার কোম্পানির পক্ষে সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট খালিদ বিন কাবেল আল সুলামি এ চুক্তিতে সই করেন।
# ট্রান্সফর্মার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদনে সৌদি কোম্পানি ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশনের সঙ্গে চুক্তি করেছে জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি লিমিটেড।
জেনারেল ইলেকট্রিকের পক্ষে ব্যবস্থানা পরিচালক সুলতান আহমেদ ভূইয়া এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশনের পক্ষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিন নাজিব আল হাজি চুক্তিতে সই করেন।
# বাংলাদেশ সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণব্যুরো (বিএমইটি) এবং সৌদি আরবের আল মাম ট্রেডিং এস্টেটের মধ্যে জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বিএমইটির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক এসকে রফিকুল ইসলাম এবং আল মামের চেয়ারম্যান ইউসুফ আবদুলাহ আল মুশির এই সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
# ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ প্ল্যান্ট নির্মাণে সৌদি আরবের ইউসুফ আল রাজি কনস্ট্রাকশন এস্টেটের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল হালিম এবং বিনিয়োগকারী কোম্পানির ইউসুফ বিন আব্দুলাহ আল রাজি এই সমঝোতায় সই করেন।
# ‘সৌদি-বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব বায়ো-মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সৌদি আরবের আল আফালিক গ্র“প (এএইচ গ্র“প) এবং বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক হয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল হালিম এবং এএইচ গ্র“পের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ এস আলফালেক এতে সই করেন।
# বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) এবং রিয়াদ কেবলস গ্র“প অব কোম্পানির মধ্যে তার উৎপাদনের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক হয়েছে।
শিল্প সচিব মো. আবদুল হালিম এবং রিয়াদ কেবলসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুস্তাফা মোহাম্মদ রাফিয়া এই এমওইউতে সই করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুই সৌদি মন্ত্রীর বৈঠকের বিষয়ে প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, তারা সৌদি বাদশাহ ও ক্রাউন প্রিন্সের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এখানে এসে তারা যা দেখেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন, তার খুব প্রশংসা করেছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ১০ বিলিয়ন থেকে ৩৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
ইহসানুল করিম বলেন, “কাসাভি বাংলাদেশের উন্নয়নের কথা উলেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আপনার নিজের ও আপনার টিমের জন্য গর্ব করা উচিৎ’।” অতি দরিদ্রের হার কমে আসায় সৌদি মন্ত্রী বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, “তারা আশা করছেন এটা আরও কমে আসবে।”
মাজিদ বিন আবদুলাহ আল কাসাভি বাংলাদেশ-সৌদি সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন বলেও প্রেস সচিব জানান। “বাংলাদেশকে এশিয়ার টাইগার হিসেবে বর্ণনা করে মজিদ বলেন, সৌদি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।”
বাংলাদেশে আসার আগে সৌদি বাদশাহ সালমানের সঙ্গে বৈঠক করার কথাও উলেখ করের মজিদ। তিনি বলেন, সৌদি বাদশাহ বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী। প্রধানমন্ত্রী তাদের স্বাগত জানিয়ে দুই দেশের ঐতিহ্যগত সম্পর্কের কথা উলেখ করেন বলে জানান প্রেস সচিব।
“প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের দেশকে উন্নত করতে চাই। জায়গা কম হলেও আমাদের জনসংখ্যা প্রচুর।” বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে বিনিয়োগকারীদের জমি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের বিরাট অভ্যন্তরীণ বাজারের কথাও তিনি তুলে ধরেন। লালমনিরহাটে এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আইন পাস করা হয়েছে।
অন্যদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তাফা কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।