সিঙ্গাপুরের ক্যাসিনোতে টাকা ঢেলেছে কারা, তথ্য চায় দুদক
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
সিঙ্গাপুরের ক্যাসিনোগুলোতে গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের কারা জুয়া খেলেছেন, তাদের শনাক্ত করতে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। এ বিষয়ে সিঙ্গাপুরের করাপ্ট প্র্যাকটিসেস ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর (সিপিআইবি) সহযোগিতা চেয়ে একটি চিঠি পাঠানোর কথা জানিয়েছেন কমিশনের মহাপরিচালক (মানি লন্ডারিং) আবদুন নূর মুহাম্মদ আল ফিরোজ।
সিপিআইবির প্রধান উয়ং হং কুনের নামে বুধবার পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে যারা অবৈধভাবে সম্পদের মালিক হয়েছে এবং বিভিন্ন সময়ে বিদেশে অর্থ পাচার করেছে তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার ‘শূন্য সহনশীলতার’ নীতি গ্রহণ করেছে। তার সঙ্গ সংগতি রেখে দুর্নীতি দমন কমিশনও সর্বাত্মক অভিযান শুরু করেছে।
অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে তদন্তে উঠে আসা বিভিন্ন ‘সূত্রের’ কথা উলেখ করে চিঠিতে বলা হয়, কতিপয় অসাধু ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন। ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারকৃত সংশ্লিষ্টরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, তারা সিঙ্গাপুরে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন এবং ওই অর্থ দিয়ে সেখানকার ক্যাসিনোতে জুয়া খেলেছেন।
এসব বাংলাদেশি জুয়াড়ির তালিকা চেয়ে চিঠিতে বলা হয়, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে এবং অন্যান্য স্থানে ক্যাসিনোতে জুয়া খেলা ব্যক্তিদের পূর্ণ তালিকা দুদকের প্রয়োজন। জানা গেছে, সিঙ্গাপুরের ক্যাসিনোগুলোয় প্রবেশের আগে প্রত্যেক বিদেশিকে তার পাসপোর্ট জমা দিতে হয়।
সিঙ্গাপুরের ক্যাসিনোগুলোতে গত পাঁচ বছর ধরে জুয়াখেলা বাংলাদেশি নাগরিকদের পাসপোর্ট নম্বর দুদককে সরবরাহ করতে সিপিআইবিকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে।
দুদক বলছে, জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী দেশে হিসেবে ওই কনভেনশনের ৪৮ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর দুর্নীতির বিরুদ্ধে যৌথভাবে লড়াই করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর যুবলীগ, আওয়ামী লীগের মাঝারি পর্যায়ের নেতাদের ক্যাসিনোর কারবারে জড়িত থাকার তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে।
এরপর দুদকও এ বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় এবং গ্রেপ্তার ক্যাসেনোকাণ্ডে নাম আসা ব্যক্তিদের অবৈধ সম্পদের তথ্য খতিয়ে দেখতে মাঠে নামে। এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন সংসদ সদস্যসহ ৩৪ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দুদক।
যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, ঠিকাদার জি কে শামীমসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অবৈধ ক্যাসিনোর কারবারের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলাও করা হয়েছে।
দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল ইতোমধ্যে ৬০ জনের একটি তালিকা নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে বলেও দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এই দলের অপর সদস্যরা হলেন- উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, সালাউদ্দিন আহমেদ, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।