শিশু সায়মা ধর্ষণ-হত্যায় আসামি হারুনের মৃত্যুদণ্ড
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
রাজধানীর ওয়ারীতে ছয় বছরের শিশু সামিয়া আফরিন সায়মাকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় একমাত্র আসামি হারুন অর রশিদের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত। ঢাকার এক নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক কাজী আব্দুল হান্নান গতকাল সোমবার আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। এ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর বিবি ফাতেমা বলেন, রায় শুনে দÐিতের মধ্যে তেমন কোনো বিকার দেখা যায়নি।
রায়ের পযর্বেক্ষণে বিচারক বলেন, এ মামলার ঘটনা মানুষ হিসাবে আমাদের জন্য চরম অবমাননাকর। যদিও ধষর্ণের ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী থাকে না, সে কারণে পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে এ রায়ে সবোচ্চ শাস্তি দেওয়াই সমীচীন। এ রকম ন্যক্কারজনক ঘটনায় আসামি কোনোপ্রকার অনুকম্পা পেতে পারে না।
রায়ের পর সায়মার বাবা ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম আসামির সর্বোচ্চ সাজার আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমি তাড়াতাড়ি এই রায় কাযর্কর দেখতে চাই। এই রায়ের মাধ্যমে দুবৃর্ত্ত ধষর্করা যেন জেনে যায়, এ রকম জঘন্য কাজ করলে কেউ পার পায় না।
অন্যদিকে আসামির আইনজীবী মো. আনোয়ার উল্যাহ বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষ বা চাক্ষুস সাক্ষী ছিল না।
২০১৯ সালের ৫ জুলাই সন্ধ্যার পর থেকে শিশু সায়মার খোঁজ পাচ্ছিল না তার পরিবার। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওয়ারীর বনগ্রামের খালি ফ্ল্যাটের নবম তলায় তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সময় তার গলায় রশি প্যাঁচানো, মুখ বাঁধা ও রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল। খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। ঘটনার পরদিন সায়মার বাবা সালাম বাদী হয়ে ওয়ারী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
মামলার একমাত্র আসামি হারুন অর রশিদকে ওই বছর ৭ জুলাই কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবরডাঙ্গা এলাকায় তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন হারুন।
তদন্ত শেষে গতবছর ৫ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা। সেখানে বলা হয়, রঙের দোকানের কর্মচারী হারুন ধর্ষণের পর শিশুটির গলায় শক্ত পাটের রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। ওয়ারিতে যে ভবনে সায়মা তার বাবা-মার সঙ্গে থাকত, ওই ভবনের আরেকটি ফ্ল্যাটে অতিথি হয়ে এসেছিলেন হারুন। তার খালাত ভাই পারভেজের বাসায় প্রায় দুমাস ধরে থাকছিলেন তিনি।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, গতবছরের ৫ জুলাই সন্ধ্যায় পারভেজের ছোট ছেলের সঙ্গে খেলতে ওই বাসায় গিয়েছিল সায়মা। তখন হারুন ছাদ দেখানোর কথা বলে তাকে ভবনের নবম তলার একটি খালি ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও হত্যা করেন।
চলতি বছর ২ জানুয়ারি আসামি হারুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে ৮ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়। প্রথমদিন সাক্ষ্য দেন সায়মার বাবা। গত ১৯ ফেব্রæয়ারি তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ওয়ারী জোনাল টিমের পরিদর্শক মোহাম্মদ আরজুনের বক্তব্য গ্রহণের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।
এরপর ২৩ ফেব্রæয়ারি একমাত্র আসামি হারুন অর রশিদ আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। ৫ মার্চ যুক্তিতকের্র শুনানি শেষে রায়ের তারিখ ঠিক করে দেন বিচারক। বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি মো. আব্দুল বারী এবং আসামিপক্ষে মো. আনোয়ারউল্লাহ প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে যুক্তিতর্কের শুনানি করেন।