October 30, 2024
খেলাধুলা

রোমাঞ্চকর সুপার ওভারে খুলনা টাইটানসের হার

ক্রীড়া ডেস্ক
পেন্ডুলাম মতো দুলতে থাকা ম্যাচ শেষ পর্যন্ত হলো টাই। সুপার ওভারেও উত্তেজনা জিইয়ে থাকল শেষ বল পর্যন্ত। মূল ম্যাচের নায়ক রবি ফ্রাইলিঙ্ক সুপার ওভারেও ব্যাটে-বলে দেখালেন বীরোচিত পারফরম্যান্স। বিপিএল ইতিহাসের প্রথম সুপার ওভারে রোমাঞ্চকর জয় পেল চিটাগং ভাইকিংস। চার ম্যাচ খেলেও জয়শূন্য খুলনা টাইটানস। উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচটিতে সুপার ওভারে চিটাগং জিতেছে ১ রানে। মিরপুরে শনিবার মূল ম্যাচে দুই দলই থমকে গিয়েছিল ১৫১ রানে।
অথচ মূল ম্যাচের শেষ ওভারের আগে খুলনা ছিল জয়ের খুব কাছে। জিততে চিটাগংয়ের প্রয়োজন ছিল এক ওভারে ১৯ রান। মূল বোলারদের ওভার শেষ হওয়ায় মাহমুদউল­াহ বোলিংয়ে আনেন আরিফুল হককে। তার প্রথম বলে রান নিতে পারেননি নাঈম ইসলাম।
পরের বলে নাঈম মেরে দেন ছক্কা। তৃতীয় বলে আরিফুল পাল্টা জবাব দেন নাঈমকে ফিরিয়ে। কিন্তু ফ্রাইলিঙ্ক হাল ছাড়েননি তখনও। ৩ বলে যখন প্রয়োজন ১৩ রান, ফ্রাইলিঙ্ক টানা দুই বলে মেরে দেন দুটি ছক্কা! তবে শেষ বলে আরিফুলের শর্ট বলে ছোঁয়াতে পারেননি ব্যাট। দৌড়ে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে হয়ে যান রান আউট। বিপিএলের ছয় আসরে প্রথমবার ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।
সুপার ওভারেও খুলনার সামনে সেই ফ্রাইলিঙ্ক। প্রথম বলে যদিও জুনাইদ খানকে বাউন্ডারি মারেন ক্যামেরন দেলপোর্ত। তৃতীয় বলে চার আসে ফ্রাইলিঙ্কের ব্যাট থেকে। পরের বলেই দারুণ ইয়র্কারে বোল্ড ফ্রাইলিঙ্ক। শেষ দুই বল থেকে আসে দুটি সিঙ্গেল।
১১ রানের পুঁজিতে বল হাতেও চিটাগংয়ের ভরসা ফ্রাইলিঙ্ক। দ্বিতীয় বলে ফুল টস করে চার হজম করেছিলেন ডেভিড মালানের ব্যাটে। কিন্তু তার পর দারুণ বোলিংয়ে আর সুযোগ দেননি খুলনাকে। শেষ বলে দরকার ছিল ৩ রান। রাউন্ড দা উইকেটে করা ফুল লেংথ বলে পল স্টার্লিং ব্যাটেই লাগাতে পারেননি। বাই থেকে খুলনা পায় ১ রান। চিটাগং জেতে ১ রানে।
চিটাগংয়ের এই জয় আসতে পারত আরও আগেই। ১৫২ রান তাড়ায় একসময় দলকে পথে রেখেছিলেন ইয়াসির আলি চৌধুরী ও মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকেটে দুজনের জুটির সময় ম্যাচ ছিল তাদেরই নিয়ন্ত্রণে। মোহাম্মদ আশরাফুলের জায়গায় সুযোগ পেয়ে দারুণ ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নেন ইয়াসির। মুশফিকুর রহিমও শুরু থেকে খেলেছেন স্বচ্ছন্দে।
৩৪ বলে ৪১ রান করা ইয়াসিরকে ফিরিয়ে খুলনার ম্যাচে ফেরার শুরু। মোসাদ্দেক ব্যর্থ আবারও। চিটাগংয়ের ভরসা হয়ে টিকে ছিলেন মুশফিক। কিন্তু ২ ছক্কায় ২৬ বলে ৩৪ করে তিনি আউট হন স্কুপ খেলতে গিয়ে। নাটকীয় পালাবদলে এরপর ম্যাচ হাতের মুঠোয় নেয় খুলনা। সেই ম্যাচ আবার প্রতিপক্ষের মুঠো থেকে বের করে আনেন ফ্রাইলিঙ্ক। আরও অনেক নাটকের পর শেষ হাসিও ফ্রাইলিঙ্ক ও চিটাগংয়েরই।
ম্যাচের শুরুটা যদিও খুলনা করেছিল দারুণ। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা দলকে বিস্ফোরক সূচনা এনে দেন পল স্টার্লিং ও জুনায়েদ সিদ্দিক। টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা বোলার ফ্রাইলিঙ্কের প্রথম ওভারে টানা দুই বলে চার ও ছক্কা মারেন স্টার্লিং। পরের ওভারে সানজামুল ইসলামকে পরপর ছক্কা ও চার মারেন জুনায়েদ। প্রথম ২ ওভারেই খুলনা তোলে ৩০ রান। তৃতীয় ওভারে অফ স্পিনার নাঈম ফিরিয়ে দেন ১০ বলে ১৮ রান করা স্টার্লিংকে। ১৫ বলে ২০ রান করে জুনায়েদ ফেরেন ফ্রাইলিঙ্কের বলে।
তৃতীয় উইকেটে মালান ও মাহমুদউল্লাহ্‌ গড়েন ৭৭ রানের জুটি। তাতে খুলনা পায় শেষ দিকে ঝড় তোলার মঞ্চ। কিন্তু সেই ঝড় ওঠেনি। ৪৩ বলে ৪৫ করে আউট হয়ে যান মালান। মাহমুদউল্লাহ্‌ করেন ৩১ বলে ৩৩।
১ রানে জীবন পেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। ৫ বলে ১২ করে আউট হয়ে যান তিনিও। শেষ ৩ ওভারে খুলনা করতে পারে কেবল ২০ রান। খুলনার ১৫১ রানের পুঁজিতে ম্যাচের ভাগ্য হাতবদল হলো অসংখ্যবার। নাটকীয়তার নানা ধাপ পেরিয়ে নায়ক হয়ে উঠলেন ফ্রাইলিঙ্ক। মিরপুর স্বাক্ষী হলো বিপিএলের ইতিহাসের অন্যতম শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচের।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *