রণাঙ্গনের দিনগুলি
দ. প্রতিবেদক
১৪ মার্চ ১৯৭১, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৪ মার্চ ছিল শেষ দিন। জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে যোগদানের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৪-দফা পূর্বশর্ত মেনে নেয়ার দাবিতে রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র-শ্রমিক-পেশাজীবী সংগঠন এবং যুব মহিলা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সভা-সমাবেশ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। ১৪ মার্চ সকালে বঙ্গবন্ধু ও ন্যাপ নেতা খান আবদুল ওয়ালী খান আলোচনা বৈঠকে মিলিত হন। বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে রুদ্ধদ্বার কক্ষে প্রায় দেড়ঘণ্টাব্যাপী এই আলোচনাকালে জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি দলের উপনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ. এইচ. এম কামরুজ্জামানসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বঙ্গবন্ধু বলেন, স্বাধীনদেশে স্বাধীন নাগরিক হিসেবে জীবন-যাপনের জন্যই আমাদের সংগ্রাম।
বঙ্গবন্ধু রাতে এক বিবৃতিতে অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহবান জানিয়ে নতুন নির্দেশ ঘোষণা করে বলেন, বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির আকাঙ্খাকে নির্মূল করা যাবে না। আমরা অজেয়, কারণ আমরা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত। বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে সংবাদপত্র প্রেস কর্মচারী ফেডারেশনের উদ্যোগে সকালে বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে সমাবেশ শেষে মিছিলসহ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে তাঁর হাতে একটি আবেদনপত্র দেয়া হয়। এতে নেতারা যে কোন নির্দেশ পালনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে অবিলম্বে একটি জাতীয় সরকার গঠন ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ঘোষণার জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রতি অনুরোধ জানান। করাচীতে নিশাত পার্কে পিপলস পার্টির উদ্যোগে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনসভায় পিপিপি’র চেয়াম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তানের দুই অংশের দুই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাব দেন। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে তাঁর সঙ্গে সংলাপ শুরু করার জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রতি আহবান জানান। বরিশালে এক জনসভায় বাংলা জাতীয় লীগ প্রধান আতাউর রহমান খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি অস্থায়ী সরকার গঠন করার আহবান জানান। ১১৫নং সামরিক নির্দেশের প্রতিবাদে দেশরক্ষা বিভাগের বেসামরিক কর্মচারীরা নগরীতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে তাঁরা বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসভবনে গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করে বর্তমান আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন।