নিজেদের অতীত কি তারা দেখেন, প্রশ্ন ফখরুলের
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের হট্টগোল নিয়ে মন্ত্রীদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৩ বছর আগের একটি ঘটনা তাদেরকে স্মরণে আনতে বলেছেন।
নয়া পল্টনে শনিবার দুপুরে দলের যৌথ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, কয়েকদিন আগে দেখেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্যে সুপ্রিম কোর্টে আপিল শুনানির পরে আমাদের দখলদারী মন্ত্রিসভার সদস্যরা এমন বক্তব্য দিচ্ছেন যেন, সেইদিন শুনানির মধ্যে আমাদের যারা দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য্য দাঁড়িয়েছিলেন তারা মহা অপরাধ করে ফেলেছেন।
তারা এসব কথা বলার আগে নিজেদের পেছনটা কী একবার দেখার চেষ্টা করেছেন? তারা কী একবারও মনে করেছেন তারা কী করেছিলেন? আমাদের আইনজীবীরা তো একটাও খারাপ কাজ করেন নাই। যারা ছিলেন তারা নিজের জায়গায় বসে থেকে তাদের দাবির কথা উচ্চারণ করেছেন। একটা আবেদনের কথা বলেছেন যে, আমরা ন্যায় বিচার চাই, সুষ্ঠু বিচার চাই।
জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে তার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চেয়েছিল আপিল বিভাগ। ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষকে মেডিকেল প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল।
কিন্তু সেই প্রতিবেদন না আসায় বৃহস্পতিবার জামিন শুনানি এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেয় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চ। এরপর প্রায় তিন ঘণ্টা আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে অবস্থান নিয়ে তুমুল হট্টগোল করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
২০০৬ সালে ৩০ নভেম্বরের ঘটনার টেনে এনে মোবাইল ফোনে সেদিনের কিছু আলোকচিত্র সাংবাদিকদের দেখিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর তারা (আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা) আদালতে লাঠি মিছিল করেছেন, ওইদিন আওয়ামী আইনজীবীদের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়েছিল প্রধান বিচারপতির এজলাস, তিনদিন বিচারপতিরা কোর্টে আসেননি।
আমাদের ওই সময়ের আইন প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান ওমর বীরোত্তমের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিলেন হাই কোর্ট চত্বরেই। হাই কোর্টের মধ্যে বস্তিও বসিয়েছিল, শুনানি স্থগিত হয়েছিল। ২০০৬ সালে চিফ জাস্টিসের কক্ষসহ সুপ্রিম কোর্টে ভাংচুরের ঘটনার ছবি এসেছে গণমাধ্যমে। যাদের ছবি এসেছে তারা পরববর্তিকালে অনেকে বিচারপতিও নিয়োগ পেয়েছেন এবং এখনও বিচারপতি আছেন। এসব আপনাদের (সাংবাদিকদের) সকলের জানার কথা।
মন্ত্রীর উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এখন হুমকি দিচ্ছেন। হুমকি দিচ্ছেন কী- আইনজীবীদের হট্টগোল ক্ষমার অযোগ্য। তাহলে আপনাদের ওইসমস্ত তাণ্ডব ক্ষমা পেলো কীভাবে? সুপ্রিম কোর্টের অতীতের কথাগুলো মনে করিয়ে দেওয়া দরকার।
ফখরুল বলেন, কী দুর্ভাগ্য আজকে আমাদের মিডিয়া এই কথা বলতে পারে না, লিখতে পারে না। কারণ তাদের সেই স্বাধীনতা নাই। আমি কয়েকদিন আগে বলেছিলাম যে, মিডিয়ার অবস্থাটা এমন হয়েছে যে, সরকারকে বলতেও হয়না, সেলফ সেন্সরশিপ করে। কারণ তাদের টিকে থাকতে হয়, বেঁচে থাকতে হয় এবং সত্য কথাটা তারা বলতে পারেন না, লিখতে পারেন না।
দেশবাসীকে মনে করিয়ে দেবার দায়িত্ব মিডিয়ার। আমরা জানি যে, এদেশে মিডিয়া সব সময়ই সেই দায়িত্ব পালন করেছে। জনগণের অধিকারকে রক্ষা এবং তাদের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যে দায়িত্ব সেই দায়িত্ব তারা পালন করেছে।
ভারতে নাগরিকপঞ্জীর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতবর্ষে যে এনআরসি বা নাগরিকপঞ্জী হচ্ছে- এটা সম্পর্কে নাকি কথাই বলা যাবে না। গতকালও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, কোনো চিন্তার কারণ নেই, উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। তারা আমাদের এতো ভালো বন্ধু যে আমাদের কোনো ক্ষতি করবে না।
আরে ইতিমধ্যে যেটা হয়ে গেছে সেটার কী হবে? কিছু লোক নাকি চলে এসেছে পুশ ইন। এটা আমার কথা নয়, মিডিয়ার কথা, বিজিবির কথা -কিছু লোককে ঢুকিয়ে দিয়েছে। আইন পাস হচ্ছে, যেটা হবে যে, যারা এনআরসির বাইরে তাদের মধ্যে যারা অমুসলিম অর্থাৎ খ্রিস্টান-বৌদ্ধ-জৈন-হিন্দু স¤প্রদায়ের, তাদেরকে তারা নাগরিকত্ব দেবেন। আর যারা মুসলিম তাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। প্রশ্ন করলে বলা হচ্ছে যে, তাদের নাকি যাওয়ার জায়গা আছে।
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতারও সমালোচনা করেন ফখরুল। পেঁয়াজের দাম কমে তো নাই, আরও বাড়তে শুরু করেছে, চালের দাম বাড়ছে। কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ সরকারের নেই। কিন্তু মুখে তারা তুবড়ি ফুটিয়ে বেড়াচ্ছেন যে, অত্যন্ত ভালো চলছে। উন্নয়ন, উন্নয়ন আর উন্নয়ন।
এর আগে মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে যৌথ সভায় অংশ নেন বিএনপির রুহুল কবির রিজভী, মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী সোহেল, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ এবং অঙ্গসংগঠনের নেতারা।