দাকোপে আনসার ভিডিপি’র কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ
দাকোপ প্রতিনিধি
দাকোপ উপজেলা আনসার ভিডিপির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিলডাঙ্গা ও পানখালী ইউনিয়নে বিভিন্ন জন অর্থ গ্রহণের এমন অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীরা খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা আসনার ভিডিপির কমান্ডার বরারবর পৃথক ২টি অভিযোগ দাখিল করেছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক অফিসে দাখিলকৃত অভিযোগ ও সরেজমিন ভূক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা আনসার ভিডিপি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত তার দোসরদের সহায়তায় টাকার বিনিময়ে ডিউটি বন্টন, প্রশিক্ষন প্রাপ্তদের নাম বাদ দেওয়া, আবার প্রশিক্ষনবিহীন ব্যক্তিদের অন্তভূক্তিকরন,ভূয়া নামের ডিউটি প্রদানসহ বিভিন্ন দুর্নীতি অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও দূর্গাপূর্জায় উপজেলার তিলডাঙ্গা ও পানখালী ইউপির আনসার ভিডিপি সদস্যদের দায়িত্ব পালনের সুযোগের অন্তরালে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যাপক অর্থ বানিজ্য করেছেন। তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন কমান্ডার অরুপ মন্ডল, এপিসি মোঃ আবুল বাসার, পানখালী ইউনিয়ন কমান্ডার মহাদেব মন্ডল, সহকারী কমান্ডার রাধা রানী বালা এই অর্থ বানিজ্যে উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা জাহানারা খাতুনকে সহযোগীতা করেছে বলে প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়। তারা নির্বাচন ও পূজায় দায়িত্ব (ডিউটি) দেওয়ার কথা বলে জনপ্রতি ৮শত টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ গ্রহন করেছেন। তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন আনসার ভিডিপি সদস্য কনিকা গোলদার বলেন, দূর্গা পূজায় আমাকে ডিউটি দেবে বলে পি,সি সুরঞ্জন গাইন জাহানার ম্যাডামের নাম করে আমার নিকট থেকে ১ হাজার টাকা গ্রহণ করে।
আনসার ভিডিপি সদস্য বাসন্তী হালদার বলেন, রাজার ভোটে আমাকে ডিউটি দেবে বলে অরুপ কমান্ডার ৮ শ’ টাকা নিয়েছে জাহানারা ম্যাডামকে দেবে বলে। মাধবী শীল বলেন তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন কমান্ডার অরুপ মন্ডল ২০১৮ সালের দূর্গা পূজার ডিউটি দেবে বলে আমার কাছ থেকে ৬শ’ টাকা গ্রহণ করে।
আনসার ভিডিপি সদস্য স্মৃতি গোলদার বলেন, তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন কমান্ডার অরুপ মন্ডল অফিসের কথা বলে আমার কাছ থেকে ১ হাজার টাকা গ্রহন করে। কিন্তু তালিকায় নাম থাকা সত্বেও টাকা নিয়ে আমাকে ডিউটি দেয়নি। দু’টি ইউনিয়নের সদস্যরা মুখ খুললেও ধারনা করা হচ্ছে এভাবে উপজেলার সকল আনসার ভিডিপি সদস্যদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা অবৈধভাবে আদায় করা হয়।
অভিযোগে আরো জানা যায়, ২০১৯ সালের দূর্গাপূজায় তিলডাঙ্গা ইউয়িনের শংকর গোলদারের মেয়ে মায়া গোলদারকে ৬০নং পূজা মন্ডপের বটবুনিয়া কলেজিয়েট স্কুলে সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরে দায়িত্ব পালনের জন্য তালিকায় নাম দেওয়া হয়। কিন্তু খোজ খবরে নিয়ে জানা যায় সে কয়েক বছর পূর্বেই ভারতে চলে গেছে।
এ বিয়য়ে আনসার সদস্যরা বলেন, মায়া গোলদারের জায়গায় এপিসি আবুল বাসার রবীন্দ্র গোলদারের স্ত্রী কমলা গোলদারকে মায়া গোলদার সাজিয়ে মায়া গোলদারের স্বাক্ষর জাল করে অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। আনসার ভিডিপির সনদ নাই এমন একাধিক ব্যাক্তিকে তিলডাঙ্গা ইউয়িনের আনসার ভিডিপির কমান্ডার ও তার দোসররা পরষ্পর যোগসাজসে বিভিন্ন সময় অর্থের বিনিময়ে ডিউটি দেওয়া হয় এমন অভিযোগ করেন আনসার ভিডিপির সদস্য মিনতী জোয়াদার, প্রিয়ংকা সরদার, জয়ন্তী বাছাড়সহ বেশ কয়েকজন। অপরদিকে একই অভিযোগে পৃথকভাবে খুলনা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন পানখালী ইউনিয়ন আনসার ভিডিপির সদস্যরা।
পানখালী ইউনিয়ন কমান্ডার মহাদেব মন্ডল ৬নং ওয়ার্ডের দিলীপ গাইনের স্ত্রী আনসার ভিডিপি সদস্য তুফানী গাইনকে যশোরে সেলাই প্রশিক্ষনের কথা বলে ৩ হাজার টাকা গ্রহণ করে। তিনি দাবী করে বলেন, আনসার ভিডিপির প্রশিক্ষণে আমার ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা সত্তে¡ও পানখালী ইউপির কমান্ডার মহাদেব মন্ডল অফিসের কথা বলে আমার কাছে ১ হাজার টাকা দাবী করে। এবং দাবীকৃত টাকা না দেওয়ায় আমাকে অদ্যবধী ডিউটি দেয়নি। অথচ প্রশিক্ষণ সনদ নেই এমন একই পরিবারের ২/৩ জনকে ডিউটি দেয়া হয় কেবল অর্থের বিনিময়ে। অনুরুপভাবে পানখালী ইউনিয়নের শ্যামলী রায়, ভগবতী ঢালী, সবিতা সরদারসহ একাধীক সদস্যের কাছে ইউনিয়ন কমান্ডার মহাদেব মন্ডল ও সহকারী কমান্ডার রাধারানী বালা ৮ শ’ থেকে ১ হাজার টাকা জাহানারা ম্যাডামের কথা বলে আদায় করার অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে তিলডাঙ্গা ইউনিয়ের আনসার ভিডিপি কমান্ডার অরুপ মন্ডলের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, মায়া গোলদারের পরিবর্তে কমলা গোলদারকে ডিউটি দেওয়া হয়। মায়া গোলদার বর্তমানে ভারতে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। তিলডাঙ্গা ইউয়িনের এপিসি আবুল বাসারের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন. আমি কিছু জানিনা, যা জানেন ইউনিয়ন কমান্ডার অরুপ মন্ডল। পানখালীা ইউনিয়ন কমান্ডার মহাদেব মন্ডলের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে বলেন, যাদের সনদপত্র আছে তাদের অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ না করায় আমি অন্যদের ডিউটিতে অন্তভূক্ত করেছি। অন্যান্য অভিযোগগুলো তিনি স্বীকার করেনি। অন্য অভিযুক্ত রাধা রানীর বালার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে আনসার ভিডিপির সদস্যদের অভিযোগে অভিযুক্ত দাকোপে উপজেলা আনসার ভিডিপির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহানারা খাতুনের নিকট বিষয়টি জানতে চেয়ে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন ০১৭১৮-৭৪৮৬৮৫ নম্বরে বারব্রা ফোন করলেও তিনি একবারও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আনসার ভিডিপির জেলা কমান্ডার খুলনা রেঞ্জের হাফিজ আল মোহাম্মদ গাদ্দাফির সাথে তার ব্যবহৃত মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, দাকোপে উপজেলা আনসার ভিডিপির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহানারা খাতুনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে একটি অনুলিপি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি অপর এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ওই উপজেলা আনসার ভিাডপির কর্মকর্তা না থাকায় সেখানে নতুন কর্মকর্তা দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই তিনি তার কর্মস্থলে যোগদান করবেন।