December 27, 2024
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

জোটে স্বস্তি খুঁজছে ভোটে আগ্রহীরা, পুরানো মিত্রদের ভরসা নৌকা

নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই লম্বা হচ্ছে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলের তালিকা। ২০০৮ সাল থেকেই জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করছে আওয়ামী লীগ। এবারও জোটবদ্ধ ভোট করবে দলটি। তবে কারা তাদের জোট থাকবেন সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে কিছু জানায়নি দলটি। আওয়ামী লীগসহ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে ১০টি দল জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাওয়ার কথা লিখিতভাবে জানিয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে বিগত সময়ে জোটে থাকা পুরানো মিত্ররা এবারও নিজেদের প্রতীকে ভরসা না করে নৌকায় ভোট করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং সমমনা বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল সমঝোতা পৌঁছায়নি এমন সময়ে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ফলে এখন পর্যন্ত বিএনপিসহ তাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না এটা তারা নিশ্চিত করছেন। ভোটে অংশ নেওয়ার বিপরীতে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি নিয়ে মাঠে আছে এমন ৩০ এর অধিক রাজনৈতিক দল।

তবে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে এবারও ভোটের আগে দেবর জিএম কাদের ও ভাবি রওশন এরশাদের দুই বলয় থেকে দুই ধরণের কথাবার্তা এসেছে। রওশন এরশাদ আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটের হয়ে ভোটে লড়াই করার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনকে। অন্যদিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত না জানিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতা জিএম কাদের ছাড়া অন্য কারও নেই বলে ইসিকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

নির্বাচন কমিশন থেকে শনিবার (১৮ নভেম্বর) জানানো হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন করার বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১০টি রাজনৈতিক দল আবেদন করেছে। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দল ছাড়া আরও ছয়টি দল ১৪ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’ নিয়ে নির্বাচন করবে বলে ইসিকে জানিয়েছে।
তবে দলীয় সূত্র বলছে, সরকারের সঙ্গে আসন নিয়ে বনিবনা শেষে উভয়পক্ষই ভোটে অংশ নেবে।

অন্যদিকে জোটবদ্ধ নির্বাচন করে সুফল পাওয়া ছোট দলগুলো ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নেমে পড়েছে। নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে এককভাবে নাকি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে সে কথা জানিয়ে দিয়েছে।

কোন দল কিভাবে ভোট করতে চায়

নির্বাচন কমিশন থেকে শনিবার (১৮ নভেম্বর) জানানো হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন করার বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১০টি রাজনৈতিক দল আবেদন করেছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ছাড়া আরও ছয়টি দল ১৪ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’ নিয়ে নির্বাচন করবে বলে ইসিকে জানিয়েছে।

ইসি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (জেপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, তরীকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, জাতীয় পার্টি (জাপা), বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও তৃণমূল বিএনপি জোটবদ্ধ নির্বাচনের কথা বলেছে।

আমরা মহাজোটের সঙ্গে সমঝোতায় যে কয়টা আসন পাবো সেখানে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করব। বাকিগুলোতে নিজেদের প্রতীকে করব।
—সাজ্জাদ হোসেন, দফতর সম্পাদক, জাসদ
এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, তরীকত ফেডারেশন, জেপি, সাম্যবাদী দল ও গণতন্ত্রী পার্টি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে বলে ইসিকে জানিয়েছে।

অবশ্য গণতন্ত্রী পার্টি দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ায় কোন অংশটি নিবন্ধিত তা এখনো পরিষ্কার নয়। গণতন্ত্রী পার্টি দুই অংশই আলাদা আলাদা চিঠি দিয়েছে।

জাসদের দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা মহাজোটের সঙ্গে সমঝোতায় যে কয়টা আসন পাবো সেখানে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করব। বাকিগুলোতে নিজেদের প্রতীকে করব।’ মনোনয়ন বিক্রির প্রথম দিনে ২১৩ ফরম সংগ্রহ করেছেন বলেও জানান তিনি।

এর বাইরে জাতীয় পার্টি (রওশন এরশাদ) ও বিকল্প ধারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানিয়েছে। তারা সুনির্দিষ্টভাবে নৌকা প্রতীক চায়নি। বিকল্প ধারা বলেছে, পরবর্তীতে জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জোটগত প্রতীকে তারা নির্বাচন করতে আগ্রহী।

বিকল্প ধারার সূত্রে জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে তাদের তিনজন প্রার্থী ছিলেন। তারা নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটে লড়েছেন। এবারও তাই হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির একজন নেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘গত বছর নৌকায় করেছি, এবারও নৌকার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’

জাতীয় পার্টি (রওশন এরশাদ) ও বিকল্প ধারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানিয়েছে। তারা সুনির্দিষ্টভাবে নৌকা প্রতীক চায়নি। বিকল্প ধারা বলেছে, পরবর্তীতে জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জোটগত প্রতীকে তারা নির্বাচন করতে আগ্রহী।
এদিকে জাতীয় পার্টির প্রধানপৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ চিঠি দিয়ে বলেছেন, নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক ‘লাঙ্গল’ বা প্রার্থীর ইচ্ছা অনুসারে মহাজোটে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে পারবেন।

অবশ্য জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দুটি চিঠি দেওয়াকে কেন্দ্র করে আবারও আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে পড়েছে দলটি।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘জাতীয় পার্টির যে দুটি চিঠি এসেছে, সেগুলো কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। সাধারণত কোনো দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক/মহাসচিব দলের সই করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত।’

আমাদের দল সবার জন্য উন্মুক্ত। ভোটে আগ্রহী যে কেউ আসলে আমরা তাদের নিয়ে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করব। নির্বাচন কমিশনকে আমরা একটা চিঠি দিয়েছি প্রগতিশীল ইসলামী জোটের প্রার্থী নিয়ে জোট করার জন্য।
—তৈমূর আলম খন্দকার, মহাসচিব, তৃণমূল বিএনপি
এদিকে কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আদালতের নির্দেশে নতুন নিবন্ধন পাওয়া রাজনৈতিক দল তৃণমূল বিএনপি চিঠি দিয়ে জানিয়েছে প্রগতিশীল ইসলামী জোটের প্রার্থীরা তৃণমূল বিএনপির দলীয় প্রতীক সোনালী আঁশ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে। এই জোটে ১৫টি রাজনৈতিক দল আছে। তবে কারও নিবন্ধন নেই। তাই এসব দলের কেউ সোনালী আঁশ প্রতীকে নির্বাচন করলে তারা সরাসরি তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের দল সবার জন্য উন্মুক্ত। ভোটে আগ্রহী যে কেউ আসলে আমরা তাদের নিয়ে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করব। নির্বাচন কমিশনকে আমরা একটা চিঠি দিয়েছি প্রগতিশীল ইসলামী জোটের প্রার্থী নিয়ে জোট করার জন্য।’

নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক দলগুলো মিলে নির্বাচনী জোট গঠন করে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে পারে। জোটভুক্ত দলগুলো জোটের শরিক যেকোনো দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। তবে তফসিল ঘোষণার তিন দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন বরাবর আবেদন করতে হয়।

শেয়ার করুন: