খুলনায় একুশে বইমেলায় নজর কেড়েছে যুবলীগের ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’
জয়নাল ফরাজী
খুলনার সরকারি গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে চলছে মাসব্যাপী মুজিববর্ষ একুশে বইমেলা। সময়ের সাথে ধীরে ধীরে জমে উঠছে খুলনাবাসীর প্রাণের বইমেলা। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে বইপ্রেমী ক্রেতা দর্শকদের পদচারণায় মুখর ছিল মেলাপ্রাঙ্গণ। সবকিছু ছাপিয়ে এবারের বইমেলায় বইপ্রেমীদের নজর কেড়েছে খুলনা মহানগর যুবলীগের স্টল ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’। যেখানে পাওয়া যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর অন্তত এক হাজার বই।
খুলনা মহানগর যুবলীগ সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়াচীন, শেখ হাসিনার রচনা সমগ্র, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ, ভাষা আন্দোলন, বিখ্যাত মনীষীদের জীবনী, শিশুদের জন্য বিখ্যাত ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী (বেগম রোকেয়া, শহীদ তিতুমীর, কাজী নজরুল ইসলাম জসীম উদ্দীন), তরুণদের উদ্বুদ্ধকরণ বইসহ এক হাজার বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্ণারে। কর্ণারের ডানপাশেই রয়েছে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর জীবনীর উপর ৩১৫ ফটোগ্রাফি। যাতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসকে।
স্টলের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য মো. মেহেদী হাসান রাসেল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণারে প্রতিদিন স্থানীয় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসেন। তারা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন, অটোগ্রাফ দেন। এতে শিক্ষার্থীরা উৎসাহ পায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণারে প্রতিদিন সব বয়সের বইপ্রেমীরা ভীড় করেন। এখানে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য ৭ই মার্চের ভাষণের লিখিত কপি দেওয়া হয়। এছাড়া গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদেও মুহম্মদ জাফর ইকবালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইটিও বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এখানে সব বয়সের পাঠকের জন্য কুইজ প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়েছে।’
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পরে বঙ্গবন্ধু কর্ণারে আসা যশোর বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক ড. বিশ্বাস শাহিন আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রথমবারের মতো কোন রাজনৈতিক দল এমন উদ্যোগ নিয়েছে। নি:সন্দেহে এটি ভালো উদ্যোগ, এজন্য আমি মহানগর যুবলীগকে ধন্যবাদ জানাই। মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে বইপড়ার বিকল্প নেই।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় খুলনা আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক এ এস এম আব্দুল হক বলেন, ‘খুলনা মহানগর যুবলীগের এ মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। বঙ্গবন্ধুর লেখা প্রকাশনা সমগ্র সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাই এমন উদ্যোগ সকল রাজনৈতিক দলের নেয়া উচিত।’
মেলায় আসা খুলনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আফরা নাওয়ার রূপন্তী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণারে শিক্ষামূলক অনেক বই আছে। বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা বই পড়ে ভালো লাগছে। এখান থেকে উত্তর খুঁজে কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি।’
খুলনার আযমখান সরকারি কমার্স কলেজের মাষ্টার্স ফাইনাল পর্বের শিক্ষার্থী মো. ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘সব ধরনের বইপ্রেমীদের জন্য বঙ্গবন্ধু কর্ণার যথেষ্ঠ। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সম্পর্কে জানার জন্য যা প্রয়োজন সবই আছে এখানে। বঙ্গবন্ধু সকলের, তাই তার লেখা, জীবনী ও আদর্শ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়াই হোক মুজিববর্ষের অঙ্গীকার।’
এ বিষয়ে খুলনা মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর জীবনী, আদর্শ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে সেজন্যই মুজিববর্ষ বইমেলায় ব্যতিক্রমীভাবে বঙ্গবন্ধু কর্ণার খোলা হয়েছে। আগামীতে আরও বড় পরিসরে বঙ্গবন্ধু কর্ণার রাখা হবে।’
এদিকে মুজিববর্ষ একুশে বইমেলার ৭ম দিনে শুক্রবার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে বেলা ১১টায় বইমেলার মঞ্চে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল ৪টায় বইমেলার মঞ্চে প্রভাতী স্কুল খালিশপুর খুলনার ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। বিকাল ৫টায় মোহনা’র শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এছাড়া সন্ধ্যা ৬.১০ মিনিটে অবকাশ এর বাচিক শিল্পীদের পরিবেশনায় আবৃত্তি পরিবেশনা হয়। পরিশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পরিষদ ও জ্ঞান বিকাশ সঙ্গীত একাডেমি, খুলনা এর শিল্পীবৃন্দ।