April 24, 2024
আন্তর্জাতিকলেটেস্ট

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের আদালতে গাম্বিয়ার মামলা

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে মিয়ানমার। নেদারল্যান্ডসের দি হেগের ‘দি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস’ (আইসিজে)-এ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সোমবার এ মামলা করেছে ওআইসিভুক্ত দেশ গাম্বিয়া। গতকাল সোমবার একথা জানিয়েছেন গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী আবুবকর তামবাদউ।

হেগ-এ এক সংবাদ সম্মেলনে তামবাদউ বলেন, জেনোসাইড কনভেনশনের আওতায় আমরা মাত্রই আইসিজে-তে আমাদের আবেদন জমা দিয়েছি। মিয়ানমারকে তার নিজ দেশের মানুষ: রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এমন কাজ করার জন্য জবাবদিহিতা করানোই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের চোখের সামনে গণহত্যা ঘটবে আর আমরা তা দেখেও কিছু না করলে আমাদের প্রজন্মের জন্য তা খুবই লজ্জ্বার ব্যাপার হবে, বলেন তামবাদউ।

এ মামলার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা নিপীড়নের জন্য সমালোচনার মুখে থাকা মিয়ানমার প্রথম আন্তর্জাতিক কোনো আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। আইসিজে হল জাতিসংঘের প্রধান বিচারিক অঙ্গ; ১৯৪৫ সালে গঠনের পরের বছর থেকে এই আদালত কার্যকর। স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আইনি বিরোধ নিষ্পত্তি করে থাকে এ আদালত।

যুক্তরাজ্যের দৈনিক গার্ডিয়ান জানায়, গাম্বিয়া তাদের ৪৬ পৃষ্ঠার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ এবং তাদের আবাস ধ্বংসের কথা বলেছে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় ‘বিদ্রোহীদের’ হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেই সঙ্গে শুরু হয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল।

গত দ্ইু বছরে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। তাদের কথায় উঠে আসে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ, যাকে জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে জাতিসংঘ।

রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও (আইসিসি) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নালিশ গেছে। তার মধ্যেই জাতিসংঘের আদালতে মামলা করল আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া।

গার্ডিয়ান লিখেছে, যদি আইসিজে মামলাটি বিচারের জন্য গ্রহণ করে, তবে এটাই হবে গণহত্যার নিজস্ব তদন্তে আইসিজের প্রথম উদ্যোগ। এর আগে তদন্তের ক্ষেত্রে তারা অন্য সংস্থার উপর নির্ভর করত।

আইসিজে’র বিধি অনুসারে, জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে আ্ন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ তুলতে পারে।

গণহত্যা প্রতিরোধ ও এর শাস্তি বিধানে ১৯৮৪ সালে স্বাক্ষরিত কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। ১৯৫৬ সালে ওই ‘জেনোসাইড কনভেনশনে’ সই করেছিল মিয়ানমার।

গাম্বিয়াও এ কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। এই কনভেনশনের আওতায় দেশগুলো শুধু গণহত্যা থেকে বিরত থাকাই নয় বরং এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ করা এবং এমন অপরাধের জন্য শাস্তি বিধানেও বাধ্য। রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য মিয়ানমারকে বিচারের আওতায় আনতে যে ১০টি সংগঠন গাম্বিয়াকে সহায়তা করছে, তাদের একটি হল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

এইচআরডব্লিউর পরিচালক পরম-প্রিত সিং এক বিবৃতিতে বলেন, গাম্বিয়ার এই আইনি পদক্ষেপের ফলে বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হল। এখন আদালত রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচাতে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নিতে পারে।

১৯৯৩ সালে বসনিয়ায় গণহত্যার বিচারের শুরুতে আইসিজে সার্বিয়ার বিষয়ে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নিয়েছিল। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে গাম্বিয়ার পদক্ষেপে সহায়তা দিতে অন্য দেশগুলোর প্রতি আহŸান জানিয়েছেন ‘নো পিস উইদাউট জাস্টিস’ এর পরিচালক অ্যালিমস স্মিথ, যে সংগঠনটিও একাজে এইচআরডব্লিউর মতো সহায়তা দিচ্ছে।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার অভিযোগ অস্বীকার করে মিয়ানমার বলে আসছে, তাদের ওই লড়াই ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে, কোনো জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে নয়।

তবে জাতিসংঘ গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বলেছে, রাখাইনে গণহত্যা ঠেকাতে, এতে জড়িতদের বিচার করতে মিয়ানমার সরকার কিছুই করেনি। সেখানে যেভাবে তা ঘটানো হয়েছে, মাত্রা, ধরন এবং বিস্তৃতির দিক দিয়ে সেটা ‘গণহত্যার অভিপ্রায়কে’ অন্য কিছু হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টার সমতুল্য।

রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ-নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বলেছে, সাতটি ঘটনার মধ্যে এটাও একটা, যা প্রমাণ করে রোহিঙ্গা জাতিগতভাবে নির্মূল করাই ছিল মিয়ানমারের সেনা অভিযানের উদ্দেশ্য।

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *