September 8, 2024
জানার আছে অনেক কিছু

নুরুল ইসলাম লাবলু

কাফনের কাপড়ের কি কোন পকেট থাকে?

সারাদিন কোন কিছু লিখতে পারিনি। সকালে হাউজ পরিস্কার করেছি। সিলিং ফ্যানে ঝুল জমে ছিল, মুছে পরিস্কার করেছি। দুপুরের পর ছোট মেয়েকে নিয়ে তার সহপাঠির বাড়িতে গেছি। সন্ধার পর ফিরে আমাদের এক ছোটভাইয়ের অনুরোধে তার “ম্যাগনা কার্টা কি” প্রশ্নের উত্তর লিখছি উইকিপিডিয়া থেকে, দেখি মুর্শিদা আমার জানালার কাছে গ্রিল ধরে দাড়িয়ে।

“আফনের এট্টু আমার সাথে নিরালার মোড়ে যাওন লাগবো”

কেন? আমি জিজ্ঞাসা করলাম।

মুর্শিদা জানালো, নিরালার মোড়ে এক হোমিওপ্যাথি ডাক্তার তাকে বলেছেন চার হাজার টাকা দিলে অপারেশন ছাড়াই তার ছেলে সাকিবের চিকিত্সা করবেন তিনি। যদি রোগ না সারে তাহলে টাকা ফেরৎ। অনুরোধ, আমি যেন ডাক্তারের কাছ থেকে একটি লিখিত নেই। যেন পরবর্তীতে রোগ না সারলে তাকে ধরা যায় ও টাকা ফেরত পাওয়া যায়।

সরবত বিক্রেতা মতলেবের বউ মুর্শিদার আগের ঘরের এই ছেলেটির অনেকদিন ধরে নাকের মধ্যে পলিপস। রোগাপাতলা ছেলেটার হাপানির সমস্যাও আছে। অসুস্থ হয়ে পড়লে কষ্টের সীমা থাকে না।

নিরালার ঐ ডাক্তারের কাছে আমি মুর্শিদার সাথে গেলাম।

ভদ্রলোক বৃদ্ধ, লম্বা সাদা দাড়ি, পরনে লম্বা জোব্বা, মাথায় টুপি। দেখলেই বোঝা যায়, পুরোদস্তুর ইসলামিক মাইন্ডেড মানুষ।

আমি যখন তার রুমে ঢুকলাম তিনি কম্পিউটারের স্কিন টিস্যু পেপারে মুছে পরিস্কার করছিলেন। মুখ তুলে মুর্শিদার দিকে তাকিয়ে বললেন, চিকিত্সা নেবেন সিদ্ধান্ত নিলেন?”

মুর্শিদা আমার দিকে ফিরবে জানতাম, আমি বললাম, “চাচা চিকিত্সা উনি নেবেন। কিন্তু বলছিলাম কি…. উনি তো গরিব মানুষ, উনার স্বামী গ্রীষ্মে লেবুর সরবত বিক্রি করেন, শীতে রিক্সা চালান। দু:খ কষ্টের সংসার। টাকাটা উনি খুব কষ্টে সৃষ্টে যোগাড় করেছেন। তাই আপনি যদি-

“দেখুন, আমার একটা প্রশ্নের জবাব দিন, কাফনের কাপড়ের কি কোন পকেট থাকে?”

আমি আকস্মিক এই প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।

বললাম না, থাকেনা।

চাচা বললেন, যেহেতু কাফনের কাপড়ের কোন পকেট থাকেনা, যত টাকাই আমি ইনকাম করি না কেন, টাকা আমি কবরে নিয়ে যেতে পারবো না। এশার আজান হয়ে গেছে। আমি নামাজ পড়তে যাবো।” আমার দিকে ফিরলেন, তারপর তার টেবিলে ওপর রাখা আমার মোবাইলটা ইঙ্গিত করে বললেন

“আপনার মোবাইলে একটা ছবি তুলে রাখুন। যদি পেয়াজের খোসার মত দেখতে মোটা এই পলিপস দুর করতে না পারি, তাহলে টাকা আমি ফেরত দিয়ে দেবো।

আমি মুর্শিদাকে বললাম, তুমি টাকা দিয়ে দাও, মুর্শিদা। সবার কাছ থেকে লিখিত নেয়া লাগে না।

শেয়ার করুন: