৩০ জন নিয়ে চলছে ৩ হাজার কোটি ডলারের টেলিগ্রাম
বর্তমান বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও পাভেল দুরভ গত শনিবার (২৪ আগস্ট) ফ্রান্সে গ্রেপ্তার হন। এরপর তার ব্যাপারে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আসছে। এবার টেলিগ্রামের কর্মী সংখ্যা নিয়ে তথ্য প্রকাশ করেছেন ভারতীয় ব্যবসায়ী হর্ষ গোয়েঙ্কা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দুরভের একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও প্রকাশ করেন তিনি। ভাইরাল হয়ে যাওয়া ওই ভিডিওর পোস্টে গোয়েঙ্কা জানান, প্রায় ১০০ কোটি ব্যবহারকারী এবং ৩০ বিলিয়ন ডলার বাজারমূল্যের টেলিগ্রাম সংস্থাটি মাত্র ৩০ জন কর্মী নিয়ে পরিচালনা করে আসছেন সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া দুরভ।
অবাক করা বিষয় হলো—৩০ জন কর্মী থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানের কোনো মানবসম্পদ বিভাগ নেই! এই ধরনের দায়িত্বগুলো দুরভ নিজেই তা সামলান।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের কাছাকাছি লে বুর্গেট বিমানবন্দরে অসংযমী ব্যবহার এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অসহযোগিতা এবং টেলিগ্রাম অ্যাপটি অপরাধমূলক কার্যকলাপে সহায়তা করছে—এমন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় দুরভকে। তবে টেলিগ্রামের অফিশিয়াল এক্স অ্যাকাউন্ট এসব অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ফরাসি পুলিশ টেলিগ্রামের সিইওকে প্যারিসের উত্তরে একটি বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করেছে। দেশটির সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, প্রাইভেট জেট লে বোর্গেট বিমানবন্দরে অবতরণের পর তাকে গ্রেপ্তার করে ফরাসি পুলিশ।
রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম তাস জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্পষ্ট করার জন্য ফ্রান্সে অবস্থিত রাশিয়ার দূতাবাস ‘তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ’ নিচ্ছে। অন্যদিকে ফ্রান্সের টিভি চ্যানেল টিএফ১ জানিয়েছে, ব্যক্তিগত জেটে ফ্রান্সে গিয়েছিলেন পাভেল দুরভ।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮৪ সালে রাশিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন ৩৯ বছর বয়সী দুরভ। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামের মালিক ও প্রধান নির্বাহী তিনি। ব্যবহারকারীদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় এই ম্যাসেজিং অ্যাপটি ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক এবং উইচ্যাটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ২০২৫ সালের মধ্যে নিজেদের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০০ কোটিতে নিয়ে যাওয়াও লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে তারা।
রাশিয়া, ইউক্রেন এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে টেলিগ্রাম ব্যাপক জনপ্রিয়। এছাড়া রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কো এবং কিয়েভের নেতারা এটি ব্যাপক হারে ব্যবহার করছে। কিছু বিশ্লেষক একে ‘ভার্চ্যুয়াল যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে দুরভকে একজন বিলিওনিয়র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে- তিনি ১৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের মালিক। ২০১৪ সালে রুশ সরকার পাভেল দুরভের তৈরি ‘ভিকন্টাকি’ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে বিরোধীদের যোগাযোগ বন্ধ রাখার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু এতে তিনি রাজি হয়নি। যদিও পরবর্তী সময়ে ভিকন্টাকি নামের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটি বিক্রি করে দেন এবং রাশিয়া থেকে চলে যান।
রাশিয়া এবং ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ২০২১ সালে পাভেল দুরভ ফ্রান্সের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। যদিও তিনি তার টেলিগ্রাম ম্যাসেজিং অ্যাপটি ২০১৭ সাল থেকে দুবাইতে বসে পরিচালনা করছেন।
গত এপ্রিলে মার্কিন সাংবাদিক ট্রুকার কার্লসনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দুরভ জানান, কারো নির্দেশনা মেনে কাজ করার চেয়ে নিজের মতো কাজ করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য রাশিয়া থেকে বের হয়েছেন তিনি। তার প্রতিষ্ঠান টেলিগ্রামের জন্য বার্লিন, লন্ডন, সিঙ্গাপুর এবং সানফ্রান্সিস্কোতে জায়গা খুঁজছেন বলেও জানান টেলিগ্রাম সিইও।