September 19, 2024
আন্তর্জাতিক

হাসপাতালে চিকিৎসক তরুণী ধর্ষণ-হত্যা, বিক্ষোভে উত্তাল গোটা ভারত

কলকাতার একটি প্রথম সারির মেডিকেল কলেজে কতর্ব্যরত অবস্থায় একজন তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা ভারত। ৩১ বছর বয়সী ওই তরুণীর দেহের ময়নাতদন্তে চরম যৌন লাঞ্ছনার প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ গোটা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, এই অভিযোগ ওঠার পর সমাজের সর্বস্তরের মানুষ কার্যত ফুঁসে উঠেছে।

নিহত তরুণী ছিলেন কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক। কলকাতার কাছে শহরতলি সোদপুর এলাকার একটি অতি সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ছিলেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে টানা ৩৬ ঘণ্টার ‘অন-কল’ ডিউটিতে ছিলেন তরুণী চিকিৎসক। রাতে প্যারিস অলিম্পিকে জ্যাভেলিন থ্রো’র ইভেন্ট টিভিতে দেখে এবং অনলাইনে আনানো খাবার সহকর্মীদের সঙ্গে খেয়ে চারতলার পালমোনোলজি বিভাগের সেমিনার হলে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিতে যান তিনি।

পরদিন সকালে জুনিয়র সহকর্মীরা ওই হলের ভেতরেই তার অর্ধনগ্ন মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। নিহত তরুণীর গোপনাঙ্গের পাশেই পড়ে ছিল মেয়েদের মাথার চুলের একটি ক্লিপ।

তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ তাদের প্রথমে জানিয়েছিল, তাদের মেয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে। পরে অবশ্য তীব্র জনরোষ ও ক্ষোভের মুখে পুলিশ এই ঘটনায় ধর্ষণ ও হত্যার মামলা দায়ের করেছে।

আর জি কর মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনিও বিষয়টি আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, রাতের বেলা একা একা সেমিনার হলে গিয়ে মেয়েটি ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ কাজ করেছে।

পরে আন্দোলনরত মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসকদের চাপে অভিযুক্ত ওই প্রিন্সিপাল গত সোমবার নিজের পদ ও সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। কিন্তু এই ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে কলকাতাসহ সারা ভারতে প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে।

ভারতজুড়ে বিক্ষোভ

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কলকাতায় ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে চিকিৎসকরা বিক্ষোভ শুরু করায় মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) ভারতের বেশ কিছু শহরে হাসপাতালগুলোর সেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে।

টেলিভিশনে প্রচারিত ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, সোমবার হাজার হাজার চিকিৎসক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল।

মঙ্গলবার সেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা ভারতে। কেবল মহারাষ্ট্রেই আট হাজারের বেশি সরকারি চিকিৎসক বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। সেখানকার হাসপাতালগুলোতে জরুরি বাদে সব ধরনের সেবা বন্ধ রয়েছে।

রাজধানী নয়াদিল্লিতেও বিক্ষোভ করেছেন চিকিৎসকরা। একটি বড় সরকারি হাসপাতালের সামনে সাদা কোট পরে অবস্থান ধর্মঘট করেছেন তারা। এসময় কলকাতার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন বিক্ষোভকারীরা।

ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষ্ণৌ এবং পশ্চিমাঞ্চলের পর্যটননির্ভর রাজ্য গোয়ার মতো এলাকাগুলোতেও চিকিৎসকদের বিক্ষোভের কারণে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন হাজার হাজার রোগী।

শেয়ার করুন: