হাইকোর্টের মন্তব্য : প্রহসনের বিচার করলে আল্লাহ আমাদের বিচার করবেন
হাইকোর্ট বলেছেন, অনেক সময় প্রহসনের বিচার হয়। পৃথিবীতে যুগে যুগে প্রহসনের বিচার হয়েছে। সক্রেটিস, গ্যালিলিও, সাদ্দাম হোসেন, রাজা নন্দ কুমার প্রহসনের বিচারের শিকার হয়েছেন। রাজা নন্দ কুমার জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ছিলেন। ওয়ারেন হেস্টিং ও তার বিচারপতি মিলে রাজা নন্দ কুমারকে প্রহসনের বিচার করে হত্যা করেছিলেন। আমরা (বিচারপতিরা) যদি প্রহসনের বিচার করি তাহলে আল্লাহ আমাদের বিচার করবেন।
গতকাল (বুধবার) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি মো: আমিনুল ইসলামের ডিভিশন বেঞ্চ উপরোক্ত মন্তব্য করেন। আদালত আরও বলেন, শপথ গ্রহণের পর কোনো বিচারপতি রাজনীতি করেন না। বিচারপতি হওয়ার আগে আমরা রাজনীতি করতে পারি। কিন্তু শপথ নেয়ার পর বিচারপতিগণ রাজনীতি করেন না। রাজনীতি করতে পারেন না।
বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল তারপক্ষের আপিল শুনানিকালে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি মো: আমিনুল ইসলামের ডিভিশন বেঞ্চ উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
আদালতে শুনানির প্রথমেই বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মাই লর্ড ! আমরা শঙ্কিত! ’ তখন আদালত বলেন, ‘কী হয়েছে বলুন?’ এ সময় এজে মোহাম্মদ আলী আদালতের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, বিচারপতিগণ কি শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ ? এক বিচারপতি এটা বলেছেন। বাজারে এ বক্তব্য এসেছে। এ কারণে আমরা শঙ্কিত।
আদালত তখন বলেন, বিচারপতি হওয়ার আগে আমরা রাজনীতি করতে পারি। কিন্তু শপথ গ্রহণের পর বিচারপতিরা রাজনীতি করেন না। রাজনীতি করতে পারেন না। এ পর্যায়ে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, বাজারে এসেছে, একজন বিচারপতি বলেছেন, বিচারপতিরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ।
তখন হাইকোর্ট বলেন, বাইরে কে, কোন্ প্রসঙ্গে বলেছেন, সেই বক্তব্য আদালতে বলে আমাদের মিসগাইড করবেন না। আমাদের প্রতি অনাস্থা থাকলে বলুন। তখন আইনজীবী বলেন, আপনাদের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। আদালত বলেন, আমরা (বিচারপতিরা) যদি প্রহসনের বিচার করি তাহলে আল্লাহ আমাদের বিচার করবেন। তেমনি আপনারা আদালতের কাছে মিথ্যা সাবমিশন করলে আল্লাহর কাছে দায়ী থাকবেন।
আদালত বলেন, অনেক সময় প্রহসনের বিচার হয়। পৃথিবীতে যুগে যুগে প্রহসনের বিচার হয়েছে। সক্রেটিস, গ্যালিলিও, সাদ্দাম হোসেন, রাজা নন্দ কুমার প্রহসনের বিচারের শিকার হয়েছেন। রাজা নন্দ কুমার জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ছিলেন। ওয়ারেন হেস্টিং ও তার বিচারপতি মিলে রাজা নন্দ কুমারকে প্রহসনের বিচার করে হত্যা করেছিলেন।
পরে বেগম খালেদার পক্ষে এ জে মোহাম্মদ আলী শুনানি শুরু করেন। এ সময় দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান ও সরকারপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পি উপস্থিত ছিলেন। পরে আদালত নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আবেদনের পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী সোমবার তারিখ ধার্য করেন।
প্রসঙ্গত: গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় ‘বিচারপতি শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ উল্লেখ করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, এ সংবিধান হলো আমাদের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক দলিল। বঙ্গবন্ধুর যে রাষ্ট্র-দর্শন, রাজনৈতিক দর্শন, সামাজিক দর্শন সব দর্শনের প্রতিফলন ঘটেছে এই সংবিধানে।
তিনি বলেন, ইদানীং সুষ্ঠু নির্বাচন, বিদেশি প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এসব নিয়ে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, গণতন্ত্র চাই। বঙ্গবন্ধুর শোষিতের গণতন্ত্র কী ? শুধু ভোট দেয়াই একমাত্র গণতন্ত্র নয়। ভোট দিয়ে রাজা ও মন্ত্রীর পরিবর্তনই গণতন্ত্র নয়। যে গণতন্ত্র মানুষের ভাতের নিশ্চয়তা, বেকারের চাকরির সংস্থান ও দেশের মানুষের সার্বিক মুক্তি ঘটাতে না পারে না, বঙ্গবন্ধু সে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না।
আপিল বিভাগের এ বিচারপতি আরও বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত হবে না, যে ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির উন্মেষ ঘটে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এমন হবে না, শুধু ভোট দিয়েই এখানে জঙ্গিবাদের উত্থান হবে। সংবিধান রক্ষার যে শপথ নিয়েছি, সে অবস্থায় থেকে মুক্তিযুদ্ধের আবহ ও প্রেক্ষাপট, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ সবকিছু মাথায় নিয়ে বিচারিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।