হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা, প্রায় ফাঁকা ক্যাম্পাস
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। একই সঙ্গে নিরাপত্তার স্বার্থে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো ছাড়তে শুরু করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা দলে দলে ব্যাগ-ব্রিফকেস হাতে হল ছাড়ছেন। বিকেলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাবির সব আবাসিক হল প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে। সেসব হল এলাকায় গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও তেমন চোখে পড়েনি। ক্যাম্পাসের সবখানেই ছিল সুনসান নীরবতা।
এর আগে দুপুরে ঢাবি সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত আসে। একই সঙ্গে বিকেল ৬টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ নির্দেশনার পরই ব্যাগপত্র গুছিয়ে দ্রুত হল ছাড়তে শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর ঢাবির আবাসিক হলগুলো খালি করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে দুপুরেই ঢাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ জন শিক্ষক উদ্বেগ জানান। তারা ঢাবি ভিসির সাক্ষাৎ না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ অন্যদের সঙ্গে দেখা করেন।
বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
ওই সমাবেশে ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন ক্যাম্পাসে বিজিবি মোতায়েনের নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটা তো বাংলাদেশের সীমান্ত নয়, এখানে বিজিবির থাকার কথা নয়। যদি তারা এখানে আসেনও, তাহলে শিক্ষার্থীদের পক্ষে থাকতে হবে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বলতে পারেন না। শিক্ষার্থীরা যেটা চাইবে, সেটা করতে দিতে হবে। তাদের কোনো কিছুতে বাধ্য করবেন না।
এদিকে, সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে হল ছাড়া নির্দেশ থাকায় বিকেল ৫টার পরই ঢাবির হলগুলোর সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। এসময় পুলিশ মাইকিং করে ছাত্র-ছাত্রীদের হল থেকে দ্রুত বের হওয়ার আহ্বান জানান। সেখানকার দায়িত্বরত পুলিশ জানিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ না করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনে গিয়ে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, সন্ধ্যা ৬টার পর শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের অনুমতি দিয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। কারণ ৬টার পর হলে অবস্থান করা নিষেধ।
বিকেল সাড়ে ৫টার পর ঢাবির মাস্টারদা সূর্যসেন হল, কবি জসীম উদদীন হল, জিয়াউর রহমান হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বিজয় ৭১ হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, শহীদুল্লাহ হল, জগন্নাথ হল, এফএইচ হল, একুশে হলের সামনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ব্যাগ ও বইপত্র গুছিয়ে তড়িঘড়ি করে হল ছাড়ছেন। এসময় অনেক শিক্ষার্থীকে চোখ মুছতে মুছতে হল থেকে বের হতে দেখা যায়। অনেকে হলের ভেতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগানও দেন।
একই চিত্র দেখা গেছে মেয়েদের শামসুন্নাহার হল, রোকেয়া হল, সুফিয়া কামাল হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ও বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল এলাকাতেও। নারী শিক্ষার্থীও ব্যাগ ও বইপত্র গুছিয়ে দুপুরের পর থেকেই হল ছাড়তে শুরু করেন।
এর আগে বিকেল ৪টায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের উদ্দেশে ঢাবিতে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বিকেল ৪টার পর ভিসি চত্বরে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো ছয়টি কফিন রেখে পূর্বঘোষিত এ গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন।
গায়েবানা জানাজা শেষে শিক্ষার্থীরা কফিন মিছিল নিয়ে টিএসসির দিকে এগোতে চাইলে সেখানে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছোড়ে। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
সন্ধ্যার পর সরেজমিনে দেখা গেছে, আবাসিক হলগুলোর সামনে ও ভেতরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তেমন আনাগোনা নেই। তবে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি চোখে পড়েছে।