‘স্বাস্থ্যখাতে স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা এখনো রাজত্ব করছে’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরে পতিত আওয়ামী স্বৈরাচার সরকারের প্রেতাত্মারা এখনো রাজত্ব করে চলছে। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের তুলনায় এখানে কোনো পরিবর্তন দৃশ্যমান নয়। স্বৈরাচারের দোসর দুই সচিব, সচিবালয়ের অন্যান্য কিছু কর্মকর্তা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী দুই মহাপরিচালক এবং অধিদপ্তরে তাদের অধস্তন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা তাদের পদে বহাল থেকে এখনো ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে নবনিযুক্ত উপদেষ্টার সরলতার সুযোগ নিয়ে এ সকল দুর্বৃত্ত পরস্পরের যোগসাজসে তাকে বিভ্রান্ত করে মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মে স্থবিরতা ও বিশৃঙ্খলা এনে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার এক অন্তর্ঘাতী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। ছাত্র-জনতার আশা, আকাঙ্ক্ষা ও আন্দোলনের ফসল এই অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে তাদের এ ষড়যন্ত্র রুখে না দেওয়া হলে তারা যে কোনো সময়ে স্বাস্থ্যখাতকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।
সোমবার (১৯ আগস্ট) মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে এক অবস্থান কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা। সচিব পদে অধিষ্ঠিত থাকার পরও তিনি গণভবন সংলগ্ন সরকারী বাসভবনে বসবাস করতেন, যা ৫ অগাস্ট বিপ্লবী জনতা পুড়িয়ে দিয়েছে। সরকার পতনের পরে কয়েকদিন পলাতক থাকার পরে ১৮ আগস্ট কর্মস্থলে যোগ দিয়েই তিনি বিগত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নেমে পড়েছেন। স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের সচিব আজিজুর রহমানও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কাজ করার সুবাদে বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠজন। এই দুই সচিবের আশু অপসারণ ব্যতিরেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পতিত সরকারের বিপজ্জনক প্রভাব দূর করা যাবে না।
তারা বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশিদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদুল কবির, লাইন ডিরেক্টর রোবেদ আমিন এবং তাদের কিছু সহযোগী অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বিরাট ঝুঁকি তৈরি করে আছে। এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সাবেক মন্ত্রী জাহিদ মালিক, সালমান এফ রহমান, মিঠুসহ পতিত স্বৈরাচারের পৃষ্ঠপোষক বিভিন্ন মাফিয়া গ্রুপের সহচর হিসেবে দুর্নীতি চালিয়ে আসছিল। বিগত সরকারের সবচেয়ে সুবিধাভোগি এডিজি ডা. আহমেদুল কবির এবং ডা. রোবেদ আমিন ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ছাত্রদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে শান্তি মিছিল করেছে। ৫ আগাস্ট বিজয়ের পর এখন রং বদলিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সাথে মিশে গিয়ে তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিজেদের দখল বজায় রাখার চেষ্টা করছে। এরাই শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ডব্লিউএইচও’র রিজিওনাল ডিরেক্টর বানানোর মূল ভূমিকা পালন করেছিল। গতকাল রোববার সচিব জাহাঙ্গীরের কারসাজিতে অধ্যাপক খুরশিদ আলমের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে তারই সহযোগী ডা. রোবেদ আমিনকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসক সমাজ ইতোমধ্যেই এই নিয়োগ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। বক্তারা আরও বলেন, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের দুই অতিরিক্ত মহাপরিচালক হচ্ছে- স্বৈরাচারী সরকারের প্রত্যক্ষ অংশীজন। বায়েজিদ খুরশিদ রিয়াজ ছিল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক পরিচালক। দুর্নীতি ও অপকর্মের বরপুত্র কামরুল হাসান মিলন আওয়ামী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপের মহাসচিব। এই দুইজন এবং অধিদপ্তরের আরো কিছু কর্মকর্তার সহায়তায় মহাপরিচালক টিটু মিয়া পতিত সরকারের বিবিধ অপকর্মে সহযোগিতা করে আসছিলেন। দেশের মেডিকেল শিক্ষাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য এরাই দায়ী।
তারা আরও বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুই কেন্দ্র বিন্দুকে অরক্ষিত রাখার অর্থ পুরো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই হুমকির মুখে ফেলা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় এই পতিত স্বৈরাচারের দোসরগণ বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ রয়েছে। আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা প্রদানে বাধা প্রদান, চিকিৎসকগণে হুমকি, আন্দোলন বিরোধী সমাবেশে যোগদানের বাধ্য করা এবং এমনকি পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট পরিবর্তনের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, যার অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন। আন্দোলনে সমর্থন এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে মত প্রকাশের জন্য ১৬ জুলাইয়ের পরে এই চক্র বেশ কয়েকজন চিকিৎসককে বদলি করেছিল।
নেতারা বলেন, এই সকল কর্মকর্তারা স্বপদে বহাল রাখার অর্থ হচ্ছে যে কোনো মুহূর্তে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অচল করে দিয়ে তারা সরকারকে একটি বিব্রতকর এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে ঠেলে দিতে পারে। এমতাবস্থায় সরকার এবং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে রক্ষার জন্য এই মুহূর্তে এ সকল আমলা ও চিকিৎসকদের অপসারণ প্রয়োজন। ছাত্র-জনতার অর্জনকে বিপদগ্রস্ত করার অধিকার কার নাই।