সীমান্তে সেনা বাড়াচ্ছে ইসরায়েল, গাজায় ফের যুদ্ধ শুরুর শঙ্কা
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আবারও যুদ্ধ শুরুর বিষয়ে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর হুমকির পর উপত্যকাটির আশপাশে সেনা বাড়াতে শুরু করেছে দখলদার দেশটি। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) থেকে গাজা সীমান্তে ট্যাংকসহ ভারী সাঁজোয়া যান জড়ো করছে ইসরায়েল।
গত ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীন আগামী শনিবার আরও তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা। তবে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে অভিযোগ এনে চলতি সপ্তাহে অনির্দিষ্টকালের জন্য জিম্মি মুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয় হামাস। এর ফলে গাজায় ফের যুদ্ধ শুরুর হুমকি দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। এর জেরে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয় নেতানিয়াহু বাহিনী। যুদ্ধ শুরুর পূর্ব পদক্ষেপ হিসেবে রিজার্ভ বাহিনী তলবের পর সীমান্তে বাড়ানো হচ্ছে ইসরায়েলি সেনা।
এদিকে হামাসের জিম্মি মুক্তি স্থগিতের ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুাঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আগামী শনিবার দুপুর ১২টার মধ্যে সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়া না হলে যুদ্ধবিরতি বাতিল করা হবে।
গত মঙ্গলবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, আগামী শনিবার দুপুরের মধ্যে আমাদের জিম্মিদের মুক্তির জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আহ্বানকে স্বাগত জানাই। এছাড়া গাজার ভবিষ্যতের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঐতিহাসিক পরিকল্পনাকেও আমরা স্বাগত জানাই।
নেতানিয়াহু আরও বলেন, হামাস যদি যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে আমাদের জিম্মিদের মুক্তি না দেয় গাজায় তীব্র লড়াই শুরু করবে ইসরায়েল।
সম্ভাব্য সংঘাত এড়াতে চেষ্টা করছে যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো। এ আলোচনার সঙ্গে যুক্ত এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, পরিস্থিতির সংঘাতে মোড় নেওয়া ঠেকাতে নিজেদের ভূমিকা জোরদার করেছেন মধ্যস্থতাকারীরা।
এদিকে গাজায় দীর্ঘ ১৫ মাসের বর্বর আগ্রাসনের পর বর্তমানে যুদ্ধবিরতি চললেও এর মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলের হাতে নিহত হয়েছেন শতাধিক ফিলিস্তিনি। এর মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো সরাসরি হামলায় প্রাণ গেছে ৯২ জনের। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও আট শতাধিক মানুষ।
বার্তাসংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি চুক্তি শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় কমপক্ষে ১১৮ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৮২২ জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গত মঙ্গলবার জানিয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুর্শ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “প্রাণহানির এই সংখ্যার মধ্যে সরাসরি হামলায় নিহত ব্যক্তিদের পাশাপাশি আহতদের মৃত্যু বা অবিস্ফোরিত বোমার বিস্ফোরণে প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের সংখ্যাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”
দীর্ঘ ১৫ মাসের যুদ্ধের পর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চলছে। তিন-পর্যায়ের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে বন্দি বিনিময় এবং স্থায়ী শান্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে।
মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছিল। দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে চালানো ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ ঝরেছে।