সীমান্তে ভারতের পুশইন সুপরিকল্পিত এবং ন্যক্কারজনক: বিজিবি ডিজি
সীমান্তে ভারতের পুশইন সুপরিকল্পিত এবং ন্যাক্কারজনক বলে মন্তব্য করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। একই সঙ্গে ভারত শরণার্থী রোহিঙ্গাদের পুশইন করছে, এটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল বলেও জানান তিনি।
বিজিবি ডিজি বলেন, গত ৭ ও ৮ মে দুই দিনে আমরা ২০২ জনকে পেয়েছি। তাদের বিএসএফ বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় পুশইন করেছে। এমন জায়গায় করেছে, যেখানে জনগণ নেই জনবসতি নেই, সে সব জায়গায়। আপনারা জানেন যে, সীমান্তের প্রতিটি স্পট ফিজিক্যালি অকুপাই করে রাখা যায় না। যে জায়গায় কেউ ছিল না, সেখানেই পুশইন করেছে।
তাদের নিয়ে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়ে পুলিশের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন করে যাদের বাংলাদেশি পেয়েছি, তারা গত দুই তিন বছর থেকে অতীতে ২০ থেকে ২৫ বছর আগে নানান কাজে ভারতে গিয়েছিলো। তাদের মধ্যে অনেকের সন্তানদি আছে যারা আগে গিয়েছিলো তারা কিন্তু ভারতের আধার কার্ডসহ অন্যান্য ডকুমেন্টস পেয়েছে। ভারতের পুলিশ বা বিএসএফ সেগুলো রেখে দিয়ে তাদের বাংলাদেশে পুশইন করেছে।
তিনি বলেন, যাদের বাংলাদেশি পাওয়া গেছে তাদের নিজ নিজ এলাকায় প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। এদের মধ্যে ৩৯ জন রোহিঙ্গা পাওয়া গেছে। তারা আমাদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রেজিস্টার্ড ছিল, কোনোভাবে পালিয়ে গেছে। তাদের আমরা ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছি।
তিনি বলেন, এরমধ্যে একটি অ্যালার্মিং বিষয় হল, ৫ জন রোহিঙ্গা পাওয়া গেছে যারা ভারতের ইউএনএইচসিআর (জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশন) এর শরণার্থী, তারা সেখানে রেজিস্ট্রেশন করা। তাদের আইডি কার্ডও আমাদের কাছে আছে। সেখানে স্পষ্ট ভারতের রেজিস্ট্রার করা। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা এই জিনিসটি সবাইকে জানাইতে চাই যে এই জিনিসটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। যে দেশের শরণার্থী সেখানেই তাদের রাখার দরকার ছিল। আমরা এমন পাঁচ জন শরণার্থী পেয়েছি।
এদিকে বিএসএফ বরাবরের মতো এ অভিযোগ স্বীকার করছে না এ বিষয়ে তারা জানে না, হয়ত তারা নিজেই চলে গিয়েছিল ভারতে, হয়ত তারা নিজেরাই প্রত্যাবর্তন করছে এ ধরনের বলার চেষ্টা করছে। এটা আমরা মানছি না। আমরা পতাকা সভা করে প্রতিবাদ লিপি দিয়েছি। একই সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেছি। তারা যদি বাংলাদেশি হয় সেটা আমরা গ্রহণ করবো।
তিনি বলেন, খাগড়াছড়ির দিকে আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনের মতো শরণার্থী আছে। যাদের বিএসএফ পুসবেগ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমাদের প্রেট্রোলিং বাড়ানোয় ও সজাগ দৃষ্টি থাকার কারণে গত দুই দিন ধরে তারা চেষ্টা করছে পারছে না। এদিক দিয়ে না পেরে তারা সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া একটি চড় আছে সেখানে ভারতের কোনো একটি জাহাজে করে ৭৮ জন ফেলে গেছে। কোস্টগার্ড তাদের উদ্ধার করে তাদের নিজ এলাকায় পাঠানোর প্রক্রিয়াধীন আছে। আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি, একই সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
২০২ জনকে ভারত যে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে সেটা কোন সীমান্ত দিয়ে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মূলত খাগড়াছড়ি, বানছগি, জামিনি পাড়া, খেদাছড়ার এলাকে দিয়ে আর কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারির চর অঞ্চল, সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া দিয়ে। যে সব এলাকায় জনবসতি নাই বা টহল যেতে সময় লাগে সেসব এলাকা টার্গেট করে চেষ্টা করছে। এটা সুপরিকল্পিত এবং এটি ন্যক্কারজনক।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারত আমাদের এখানে বেশি কিছু লোক পুশ-ইন করছে। তাতের মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিক বেশি। তাছাড়া আবার কিছু অন্য দেশেরও আছে।