April 30, 2025
আন্তর্জাতিক

সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের সফরের বিরুদ্ধে ইরাকি রাজনীতিকদের হুঁশিয়ারি

আসন্ন আরব লীগ সম্মেলনে অংশ নিতে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার ইরাক সফরের বিরোধিতায় সরব হয়ে উঠেছেন বাগদাদের প্রভাবশালী রাজনীতিকরা। ইরানপন্থী প্রভাবশালী কয়েকজন ইরাকি রাজনীতিক সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের সম্ভাব্য এই সফরের বিরোধিতা করেছেন। রোববার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি বলেছেন, আগামী ১৭ মে রাজধানীতে অনুষ্ঠিতব্য আরব লীগ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বাগদাদ।

এএফপি বলেছে, ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কারাবন্দি হয়েছিলেন তৎকালীন সিরিয়ার বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-শারা। তিনি যদি আরব লীগের সম্মেলনে অংশ নেন, তাহলে সেই ঘটনার পর এটিই হবে ইরাকে তার প্রথম সরকারি সফর।

রোববার ইরাকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকির নেতৃত্বাধীন শিয়াপন্থী রাজনৈতিক দল দাওয়া পার্টি বলেছে, তারা এমন একজন ব্যক্তিকে স্বাগত জানানোর বিরোধী; যিনি ইরাকিদের বিরুদ্ধে ‘‘অপরাধ’’ করেছেন।

ইরাকের রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতা ও ইরানপন্থি কো-অর্ডিনেশন ফ্রেমওয়ার্ক নামের একটি জোটের সদস্য নুরি আল-মালিকি। দেশটির সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে এই জোটের সদস্যদের। ইরাকের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানিকে ক্ষমতায় আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তারা।

সারার নাম উল্লেখ না করে দাওয়া পার্টি বলেছে, ‘‘আরব সম্মেলনের যেকোনো পর্যায়ে অংশ নেওয়া কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিচারিক রেকর্ডে অপরাধের অভিযোগ থাকা উচিত নয়।

ইরাকের নিরাপত্তা সূত্র বলছে, শারার বিরুদ্ধে অতীতে জারি করা একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এখনও বহাল রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন না করে সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় অগ্রাধিকার দিতে পারে; যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহায়ক হবে।

চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির মধ্যস্থতায় দোহায় শারার সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি।

যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত আসাইব আহল আল-হক মিলিশিয়া গোষ্ঠীর নেতা কাইস আল-খাজালি শনিবার এক্সে দেওয়া পোস্টে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, শারা ইরাক সফর করলে এবং তার বিরুদ্ধে থাকা পরোয়ানা কার্যকর না করা হলে ‘‘কঠিন পরিণতি’’ তৈরি হতে পারে।

তিনি বলেন, ‘‘শারার ইরাক সফরের এখনও উপযুক্ত সময় আসেনি।’’

অন্যদিকে, ইরাকের প্রভাবশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী কাতায়েব হিজবুল্লাহর মুখপাত্র আবু আলি আল-আসকারি বলেছেন, ‘‘সাজাপ্রাপ্ত আবু মোহাম্মদ আল-জোলানির (শারার পুরোনো নাম, যা তিনি বাশার আল-আসাদের পতনের পর পরিত্যাগ করেছেন) অনুপস্থিতিতে আরব সম্মেলন থমকে যাবে—এমন ভাবার কিছু নেই।’’

ইরানপন্থি কাতায়েব হিজবুল্লাহ অতীতে সিরিয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বাহিনীর হয়ে লড়াই করেছে। বাগদাদের সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্র আসাদের পতনের পর ইরাক-সিরিয়া সম্পর্ক জটিল আকার ধারণ করেছে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত ইরাক দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং আল-কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের মতো সুন্নিপন্থি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর উত্থানে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

শেয়ার করুন: