সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ / শিরোপা উৎসর্গ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের
নেপালের বিপক্ষে প্রথম জয়, গ্রুপপর্বে হারের প্রতিশোধ এবং প্রথমবারের মতো সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা। বাংলাদেশ যেন ‘এক ঢিলে তিন পাখি মারলো’।
বুধবার নেপালের কাঠমান্ডুর আনফা কমপ্লেক্সে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে স্বাগতিকদের ৪-১ গোলে হারিয়ে আরেকটি ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা।
সাউথ এশিয়ান গেমস ফুটবলে প্রথম স্বর্ণ, মেয়েদের সাফের একমাত্র শিরোপার পর এবার নেপালের মাটিতে অনূর্ধ্ব-২০ সাফে চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ।
প্রথমার্ধে স্বাগতিক নেপাল প্রাধান্য নিয়ে খেললেও ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতা ও বাংলাদেশ গোলরক্ষকের দৃঢ়তায় লিড নিতে পারেনি।
বিরতির বাঁশির কিছু সময় আগে বক্সের বাইরে ফ্রি-কিক পায় বাংলাদেশ। মিরাজুল ইসলাম বল নিয়ে ঢোকার সময় তাকে ফেলা দেওয়া হয়েছিল। মিরাজুলেরই নেওয়া দুর্দান্ত ফ্রি-কিক পোস্টে লেগে জড়িয়ে যায় নেপালের জালে (১-০)।
৫৫ মিনিটে বাঁ দিক থেকে আসাদুলের ক্রসে আসাদ মোল্লার হেড গোলরক্ষকের সামনে ড্রপ খেয়ে বলে যায় ফাঁকায় দাঁড়ানো মিরাজুলের সামনে। এবারও তিনি ভুল করেননি, হেডে বল পাঠিয়ে দেন নেপালের জালে (২-০)।
৭১ মিনিটে আরও এক গোল বাংলাদেশের। এই গোলেও মিরাজুলের অবদান। তার বাড়ানো বলে রাব্বি হোসেন রাহুল গোল করলে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ৩-০ ব্যবধানে।
৮১ মিনিটে বাংলাদেশের রক্ষণ আর গোলরক্ষকের ভুলে ব্যবধান কমায় স্বাগতিক নেপাল (৩-১)। তবে ইনজুরি সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে এক হালি পূরণ করে বাংলাদেশ। বাঁ দিক থেকে রাব্বি হোসেন রাহুলের ক্রসে পিয়াশ আহমেদ নোভা গোল করে ব্যবধান ৪-১ করেন। বিজয় উল্লাসে মাতে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
ম্যাচের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কোচ মারুফুল হক বলেন, ‘আমরা এই চ্যাম্পিয়নশিপ জুলাই-আগস্টে মাসে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের উৎসর্গ করছি। দেশের জন্য তারা জীবন দিয়েছেন। তাদের আত্মত্যাগে আমরা পেয়েছি নতুন বাংলাদেশ।’
মারুফুল হক বলেন, ‘আমরা ম্যাচটি ধীরগতিতে শুরু করেছিলাম। কারণ, ফাইনালের আগে ছেলেরা বিশ্রাম কম পেয়েছে। নেপাল দুইদিন বিশ্রাম পেয়েছে, আমরা একদিন। নেপাল খুবই ভালো দল। বেশ কয়েকজন কোয়ালিটি ফুটবলার আছে দলে। তারপর তারা এ মাঠে খেলেই বেড়ে উঠেছে। নিজেদের মাঠ, দর্শক ছিল তাদের। আমাদের ছেলেদের সবসময়ই বলেছি, তোমরা স্বাভাবিক খেলবা। আজও তারা আমারে উপদেশ মেনে খেলেছে।’
দেশের কয়েকটি অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ কোচ বলেন, ‘অনেক মানুষ কষ্ট করছেন। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে আছেন লাখো লাখো মানুষ। আমাদের নতুন বাংলাদেশ এসব মোকাবিলা করে দেশ সংস্কারের চেষ্টা করছে। আশা করি, এই চ্যাম্পিয়নশিপ দেশের মানুষকে আরো ঐক্যবদ্ধ করবে, দেশ সংস্কারের উৎসাহ পাবে।’
মিরাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা নিজেদের জন্য খেলিনি। দেশের মানুষের জন্য খেলেছি। আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কিছু দিন আগে দেশের মানুষ আন্দোলন করে, জীবন দিয়ে নতুন বাংলাদেশ এনেছে। এখন অনেক মানুষ বন্যায় কষ্ট করছে। আমরা এই মানুষদের ট্রফি উৎসর্গ করছি।’
দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় রাব্বি হোসেন রাহুলও এই ট্রফি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের উৎসর্গ করার কথা জানিয়েছেন।