সংস্কারের আগে চীনের অর্থনীতি
পূর্ব প্রকাশিতের পর
———————-
১৯৭৯ সালের আগে, চীন, চেয়ারম্যান মাও সেতুং-এর নেতৃত্বে, কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পিত, বা নিয়ন্ত্রিত, অর্থনীতি বজায় রেখেছিল। দেশের অর্থনৈতিক উৎপাদনের একটি বৃহৎ অংশ রাষ্ট্র দ্বারা পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত ছিল, যা উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করে, মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে এবং অর্থনীতির অধিকাংশ জুড়ে সম্পদ বরাদ্দ করে। ১৯৫০-এর দশকে, চীনের সমস্ত ব্যক্তিগত পরিবারের খামারগুলিকে বৃহৎ কমিউনে একত্রিত করা হয়েছিল। দ্রুত শিল্পায়নকে সমর্থন করার জন্য, কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৬০ এবং ১৯৭০-এর দশকে ভৌত এবং মানবিক পুঁজিতে বড় আকারের বিনিয়োগের উদ্যোগ নেয়। ফলস্বরূপ, ১৯৭৮ সাল নাগাদ শিল্প উৎপাদনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগ (SOEs) দ্বারা উৎপাদিত হয়েছিল, কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পিত আউটপুট লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী। প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ এবং বিদেশী-বিনিয়োগকৃত সংস্থাগুলি সাধারণত নিষিদ্ধ ছিল। চীন সরকারের একটি কেন্দ্রীয় লক্ষ্য ছিল চীনের অর্থনীতিকে তুলনামূলকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা। বৈদেশিক বাণিজ্য সাধারণত সেই সমস্ত পণ্য প্রাপ্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, যা চীনে তৈরি বা পাওয়া যেত না। এ ধরনের নীতি অর্থনীতিতে বিকৃতি সৃষ্টি করে। যেহেতু অর্থনীতির বেশিরভাগ দিক কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত হতো, তাই দক্ষতার সাথে সম্পদ বরাদ্দ করার জন্য কোন বাজার ব্যবস্থা ছিল না। তাছাড়া, ফার্ম, শ্রমিক এবং কৃষকদের আরও বেশি উত্পাদনশীল হতে বা প্রস্তুতকৃত পণ্যের গুণমান নিশ্চিতের জন্য তাদেরকে প্রণোদনা দেওয়া হতো সামান্যই। কারণ তারা প্রধানত সরকার কর্তৃক নির্ধারিত উৎপাদন লক্ষ্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে থাকতো।
চীনা সরকারের পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত চীনের প্রকৃত জিডিপি বার্ষিক গড় ৬.৭% হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যদিও এই তথ্যের যথার্থতা অনেক বিশ্লেষকদের দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, যাদের মধ্যে কেউ কেউ দাবি করেছেন যে, এই সময়ের মধ্যে, চীনা সরকারি কর্মকর্তারা (বিশেষ করে উপজাতীয় স্তরে) প্রায়শই বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে উৎপাদনের মাত্রাকে অতিরঞ্জিত করে দেখিয়েছে। অর্থনীতিবিদ অ্যাঙ্গাস ম্যাডিসন এই সময়ের মধ্যে চীনের প্রকৃত গড় বার্ষিক প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ৪.৪%.৫ এ রেখেছেন উপরন্তু, ১৯৫৮ থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের সময়সহ চেয়ারম্যান মাও সেতুং-এর নেতৃত্বে চীনের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন হয়। ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। কথিত আছে যে দুর্ভিক্ষে ৪৫ মিলিয়ন লোকের মৃত্যু হয়।৬ ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত সাংস্কৃতিক বিপ্লব চলে, যা ব্যাপক রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং অর্থনীতিকে যা ব্যাপকভাবে ব্যাহত করে। ১৯৫০ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত, ক্রয় ক্ষমতার সমতা (পিপিপি) ভিত্তিতে চীনের মাথাপিছু জিডিপি ৭ ছিল। একটি দেশের জীবনমানের সাধারণ পরিমাপ, দ্বিগুণ। যাইহোক, ১৯৫৮ থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত, চীনা জীবনযাত্রার মান ২০.৩% কমেছে এবং ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত সময়ে কমেছে ৯.৬% (চিত্র ১ দেখুন)। উপরন্তু, চিত্র ২-এ নির্দেশিত হিসাবে জাপানের মতো পশ্চিমের তুলনায় চীনা জীবনযাত্রার মান ম্লান হয়েছে।
১৯৭৬ সালে চেয়ারম্যান মাওয়ের মৃত্যুর অল্প কিছুদিন পর, ১৯৭৮ সালে, চীনা সরকার মুক্ত বাজার নীতি অনুসরণ শুরু করে। এই নীতি অনুসারে ধীরে ধীরে অর্থনীতির সংস্কার শুরু হয় এবং পশ্চিমের সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্মুক্ত করা হয়। চীনা কর্তৃপক্ষ তাদের সোভিয়েত-ধাঁচের অর্থনৈতিক নীতিগুলি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা আশা করেন, তাঁদের এই উদ্যোগ উল্লেখযোগ্যভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আনবে এবং জীবনযাত্রার মান বাড়াবে। চীনের অর্থনৈতিক সংস্কারের স্থপতি চীনের নেতা দেং জিয়াওপিং বলেছেন: বিড়ালটা সাদা না কালো সেটা কোনো বিষয় নয় সে যতক্ষণ ইদুর ধরতে পারছে”