সংবাদ সম্মেলনে গণঅধিকার পরিষদের দুই পক্ষের হট্টগোল
জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রেসক্রিপশনে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে পরিচিত ও স্বীকৃত ক্রিয়াশীল দলসমূহকে বাদ দিয়ে অখ্যাত অপরিচিত দলকে নিবন্ধন প্রদানের প্রতিবাদ’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলন ডাকে প্রাথমিক বাছাইয়ের পর টিকলেও শেষ পর্যন্ত বাদ পড়া ১০ দলের ব্যানারে।
গণ অধিকার পরিষদের উভয় অংশকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়। দুই পক্ষের প্রতিনিধিরাই এসে উপস্থিত হন। এসময় হট্টগোল করেছে গণঅধিকার পরিষদের দুই পক্ষ। এর ফলে সংবাদ সম্মেলনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
সোমবার (১৭) জুলাই দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এ ঘটনা ঘটে।
গণ অধিকার পরিষদের উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে থেকেই শুরু হয়। দেখা যায়, সংবাদ সম্মেলন শুরুর বেশ কিছুক্ষণ আগে উপস্থিত হন গণ অধিকার পরিষদের (রেজা কিবরিয়া) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফারুক হোসেন। তখনো গণ অধিকার পরিষদের আরেক অংশের সভাপতি নুরুল হক উপস্থিত হননি। এমন সময় সংবাদ সম্মেলনের সমন্বয়ক ও সঞ্চালক আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্যসচিব মজিবুর রহমান উপস্থিত নেতাদের অনানুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে বলেন। মজিবুর রহমান প্রসঙ্গক্রমে রেজা কিবরিয়া নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদকে ‘একাংশ’ হিসেবে উল্লেখ করলে প্রতিবাদ জানান ফারুক হোসেন।
তারপর গণ অধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হকসহ অংশগ্রহণকারী দলগুলোর শীর্ষ নেতারা উপস্থিত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে কথা বলেন সঞ্চালক মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা কারও পক্ষ নিতে চাই না। তাই গণ অধিকার পরিষদের উভয় পক্ষকেই এই সংবাদ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে যেন ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়, সেই আহ্বান জানান তিনি।’
আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন শুরু হলে নুরুল হককে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আহ্বান করতে গিয়ে মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা তো বলতে পারছি না একাংশের সভাপতি, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হককে বলব বক্তব্য রাখার জন্য।’ এ সময় ফারুক হোসেন বলেন, ‘মঞ্জু (সঞ্চালক মজিবুর রহমান) ভাই, আমাদের আহ্বায়কের প্রতিনিধি হিসেবে আমি উপস্থিত আছি। আপনি ওইভাবে ইয়া কইরেন।’ তারপর নুরুল হক বক্তব্য দেন। পরে অন্যান্য দলের নেতারাও বক্তব্য দেন।
রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদের (রেজা কিবরিয়া) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফারুক হোসেন বক্তব্য দেওয়ার সময় হট্টগোল বেধে যায়। সঞ্চালক বলেন, ‘আমি এখন ফারুক হোসেনকে একটু কথা বলার জন্য অনুরোধ করছি।’ এ কথা বলতেই নুরুল হক বলেন, ‘পরিচিত দলগুলোকে বাদ দিয়ে অপরিচিত দলকে নিবন্ধন দেওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন এই পর্যন্ত শেষ করলাম।’ এই কথা বলার পর নুরুল হক চলে যেতে উদ্যত হন। তখন হট্টগোল বেধে যায়।
হট্টগোলের কারণে ফারুক হোসেন বক্তব্য দিতে পারেননি। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক অসুস্থতার কারণে দেশের বাইরে রয়েছেন। তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে এখানে এসেছি।’
হট্টগোল নিয়ন্ত্রণে সঞ্চালক মাইকের নিয়ন্ত্রণ নেন। সঞ্চালক বলেন, ‘গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হচ্ছে সবাইকে কথা বলতে দিতে হবে। গণতন্ত্রের মূল্যবোধ রক্ষা করুন। আমি আপনাদের কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ করছি, আমাদের এত সুন্দর অনুষ্ঠানকে আপনারা নষ্ট করবেন না।’ তারপর সঞ্চালক মাইনরিটি জনতা পার্টির সভাপতি সুকৃতি কুমার মণ্ডলকে বক্তব্য দিতে বলেন। তখনো হট্টগোল চলে। সব মিলিয়ে ছয়-সাত মিনিট ধরে এই হট্টগোল চলে।
সংবাদ সম্মেলন শেষ হলে উপস্থিত নেতাদের মধ্যস্থতায় নুরুল হক ও ফারুক হোসেন করমর্দন করেন। এ সময় ফারুক হোসেনকে বলতে শোনা যায়, ‘নুরের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তাঁর অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদ করেছি।’
দক্ষিণাঞ্চল অনলাইন ডেস্ক