‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে সব প্রক্রিয়াই অনুসরণ করবে দুদক’
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরাতে যতসব প্রক্রিয়া আছে, সবগুলোই অনুসরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
রোববার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
মামলার আসামি শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত আনার বিষয়ে দুদক কোনো উদ্যোগ বা ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা— এমন এক প্রশ্নে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, প্রসিকিউটর, অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট আমরা ইস্যু করি না, আদালত থেকে ইস্যু হয়। মামলা কোর্টে যাচ্ছে, খুব শিগগিরই আদালত থেকে ওয়ারেন্ট অব অ্যারেস্ট ইস্যু হবে। সেক্ষেত্রে আসামি যদি অনুপস্থিত থাকে, তাকে আনার জন্য আরও প্রক্রিয়া আছে। ইন্টারপোল আছে। অন্যান্য যতসব প্রক্রিয়া আছে, সবগুলোই অনুসরণ করবো। আন্তর্জাতিক প্রসিকিউটিং এজেন্সির সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ আছে, আমরা সেভাবেই এগোবো।
তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা দুর্নীতিগ্রস্ত একজন সাধারণ জনগণের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি, যিনি পলায়ন করে অন্যত্র চলে গেছেন, তার জন্যও যে প্রক্রিয়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রী পলাতক শেখ হাসিনার জন্যও একই প্রক্রিয়া। প্রধানমন্ত্রী হোন বা না হোন—এর সঙ্গে আমাদের কার্যক্রমের তেমন কোনো হেরফের নেই।
দুদকের মামলার অনেক আসামি দেশ ত্যাগ করেছেন— এরকম এক প্রশ্নের জবাবে দুদকের প্রধান বলেন, যেসব আসামি চলে গেছেন, দুদকের সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করুন। দুদক কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়। আমি নিজে এক সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ছিলাম। দুদকের হাতে আসামিকে ধরে রাখার ক্ষমতা নেই। আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের কাছে যখনই সংবাদ এসেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য এজেন্সি যেন আসামিকে বা অভিযুক্তকে দেশ থেকে বের হতে না দেন। এরকম বেশ কয়েকজন এখনো আমাদের হিসেবের মধ্যে আছেন।’
দুদক আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুদক নিজে পুলিশি প্রতিষ্ঠান না, দুদককে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিয়ে কাজ করতে হয়। এখন আমরা অনেকেই জানি বড় বড় আসামিদের কে কে দেশে আছে, কে কে দেশে নেই। এটা আমাদের অজ্ঞাত না। যারা দেশে নেই, তাদেরকে একটি আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ফিরিয়ে আনা—যেটা কঠিন প্রক্রিয়া—সেটা আমাদের স্বীকার করতে হবে। যারা দেশে আছেন, তাদের প্রতি আমরা কতটা সদয় কিংবা কতটা নির্দয়, কতটা অবজেকটিভ—সেটি আপনারা বিবেচনা করবেন। আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের ক্ষমতার মধ্যে যতটুকু সম্ভব, তাদের ধরার চেষ্টা করছি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, ‘দুদক দুশমন দমন কমিশন নয়। দুদক দুর্নীতি দমন কমিশন। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। আমাদের কাজ দোষী চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে অভিযোগপত্র দিয়ে কোর্টের কাছে তথ্য-উপাত্তসহ তাদের সোপর্দ করা। এরপর কোর্ট বিচার করবেন।’
প্রসঙ্গত, গত ২৭ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে ‘অনিয়মের’ অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানায় দুদক। এরপর ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে ছয়টি আলাদা মামলা করা হয়। ১০ মার্চ এসব মামলার অভিযোগপত্র অনুমোদন দেয় দুদক।