শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বলায় পলককে তেড়ে মারতে যান কাদের
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এর পর আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীরা গা ঢাকা দেন, পালিয়েছেনও অনেকে। আবার দেশ ছাড়ার সময় গ্রেফতার হয়েছেন অনেকে। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাদের অনেককেই। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও।
বর্তমানে ১০ দিনের রিমান্ডে আছেন পলক। রিমান্ডে গোয়েন্দাদের জেরার মুখে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন তিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ায় তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সবাই। এবার জানা গেল, মন্ত্রীদের রোষানলেও পড়েন জুনাইদ আহমেদ পলক। শিক্ষার্থীদের পক্ষ নেয়ায় গণভবন থেকেও বের করে দেওয়া হয় তাকে।
সম্প্রতি দেশের একটি গণমাধ্যম ডিবি সূত্রে জানায়, সরকার পতনের একদফা অন্দোলনের শেষ পর্যায়ে ৪ আগস্ট গণভবনে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে পলক তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন, ‘প্রয়োজনে আমাকে বলি দিন। তারপর শিক্ষার্থীদের অন্দোলন বন্ধ করুন। তাদের চোখের ভাষা, মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করেন।’
পলক বলেন, এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আমাকে তেড়ে মারতে আসেন। তখন আমি সাহসী হয়ে গেলাম। প্রধানমন্ত্রীকে বললাম, আপনি স্টেপ ডাউন করুন। আওয়ামী লীগকে মানুষ ঘৃণা করছে, থুতু দিচ্ছে। এরপর আমাকে গণভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় এক পোস্টকে কেন্দ্র করে টেন মিনিট স্কুলের একটি চুক্তি বাতিল করে সরকার। এ বিষয়ে পলকের ভাষ্য ছিল, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে টেন মিনিট স্কুলের সঙ্গে সরকারের চুক্তি ছিল, সেটা আমি বাতিল করতে চাইনি। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জোর করে ঐ চুক্তি বাতিল করায়। কারণ, ঐ স্কুলের অন্যতম কর্ণধার আইমান সাদিক অন্দোলনকারী ছাত্রদের পক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তারা তাদের ফেসবুক প্রোফাইল লাল করেছিলেন।
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে পলক আরো বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে বাস্তবতা মেনে নেয়ার অনুরোধ জানালেও তিনি মানতে রাজি হচ্ছিলেন না। এ সময় সংশ্লিষ্ট ডিবি কর্মকর্তা তাকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি যদি সত্যিই দেশের স্থিতিশীলতা চাইতেন তাহলে দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন না কেন?’ তখন চুপ থাকেন পলক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই পল্টন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান রিকশাচালক কামাল মিয়া। এ ঘটনায় পল্টন থানায় হওয়া মামলায় গ্রেফতার হন সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান।
নিরাপত্তার কারণে তাদের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে রাখা হয়। থানা-পুলিশ হত্যা মামলার বিষয়ে খোঁজখবর নিলেও সার্বিক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবির গুলশান বিভাগ।