শেখ কামাল বেঁচে থাকলে আমাকে হয়ত এত বড় দায়িত্ব নিতে হতো না : প্রধানমন্ত্রী
বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালের সাংগঠনিক দক্ষতা, দায়িত্বশীলতা ও বহুমুখী প্রতিভার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হানিা বলেছেন, শেখ কামাল আজকে বেঁচে থাকলে আমাকে হয়তো এত বড় দায়িত্ব নিতে হতো না। তিনি আরো বলেছেন, শেখ কামালের সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল প্রবল। কিন্তু কখনো কোন নেতা হবার চেষ্টা বা কোন পদে যাওয়ার চেষ্টা করেন নি। ব্যবসা-বাণিজ্য করে পয়সা বানানোর চিন্তা কখনো তার মাথায় ছিল না। বরং এ ব্যাপারে সে অত্যন্ত সতর্ক ছিল। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) পুরস্কার-২০২৩ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির দেওয়া বক্তব্যে তিনি এমন কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
নিজ বক্তব্যে এ সময় দেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতির উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে এসে পৃষ্ঠপোষকতা করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে দেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতির বিকাশের জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও প্রয়োজন। পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এটি বিকশিত হতে পারে না।
বর্তমান সরকারের বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়ার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমি বলবো আমাদের এখানে এখন ব্যাবসা-বাণিজ্য, ব্যাংক-বীমা অনেক কিছু আমরা করে দিয়েছি। বেসরকারি খাত অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে। তারাই (খেলোযাড়রা) তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম সব জায়গায় তুলে ধরতে পারবেন। সে ক্ষেত্রেও আপনাদের (ব্যবসায়ী/উদ্যোক্তা) এই সহযোগিতাটুকু কিন্তু দরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মেয়েরা যদি সেই এভারেস্ট বিজয় করতে পারে অথবা এত স্বল্প সুযোগের মধ্যদিয়েও খেলোযাড়রা ক্রীড়াক্ষেত্রে যদি এত উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখতে পারে তাহলে এই সুনাম বাড়ানোর জন্যই দরকার পৃষ্ঠপোষকতা। তিনি আশা রেখে বলেন, যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমাদের ক্রীড়াবিদরা দেশের জন্য আরো অনেক সুনাম বয়ে আনবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে-আপনারাও কিন্তু একজন ক্রীড়াবিদকে চাকরি দিতে পারেন বা আপনাদেরও একটা ক্রীড়া সংগঠন থাকতে পারে। বিভিন্ন প্রতিভা ছড়িয়ে আছে সারা বাংলাদেশে। সেসব প্রতিভাগুলোকে আপনারা কুড়িয়ে আনেন এবং তাদের একটু সুযোগ করে দেন। আপনারা দেখবেন বাংলাদেশের জন্য এরাই সব থেকে বেশি সুনাম বয়ে আনবে।
সমাজের বিত্তবানদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, যারা বৃত্তশালী আছেন তাদেরকেও আমি বলবো ক্রীড়া সেবীদের কল্যাণে এই ফাউন্ডেশনে আপনারাও অনুদান দেবেন। কারণ, আমি জানি আপনাদের অনেক পুরনো খেলোয়াড় রয়েছেন যারা অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তাদের চিকিৎসার কোন সুযোগ থাকে না। অনেকে আর্থিক সংকটেও পড়ে। কারণ, খেলাধুলাতো বেশি বয়স পর্যন্ত করা যায় না। কিন্তু তাদের পরবর্তী জীবনটা কেমন হবে, সেটাও একটা বড় কথা। তিনি বলেন, আমি যতক্ষণ আছি দিয়ে যাচ্ছি। যাদের ঘর নাই, তাদের ফ্লাট তৈরি করে দেওয়া বা জমি দেওয়া, খেলাধুলার সরঞ্জাম প্রদান বা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা বা চিকিৎসা করিয়ে বিদেশ থেকে আনা-সব করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, চিরদিনতো আর আমি থাকবো না, আর হয়তো এভাবে আর কেউ আন্তারিকতার সাথে করবেও না। কাজেই তাদের ভবিষ্যৎ যাতে ভাল থাকে এবং ভবিষ্যতে তারা ভাল কিছু করে চলতে পারে সেজন্যই আজকে আমাদের যারা বিত্তশালী আছেন তাদের আহবান করবো আপনারা একটু উদ্যোগ নেন বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তারাও একটু উদ্যোগ নেন। তিনি জানান, তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন এবং যখন ছিলেন না তখনও তিনি খেলোয়াড়দেরকে সহযোগিতা করে গেছেন। বিশেষ করে আবাহনীর সাথে সম্পৃক্ত অধিকাংশ খেলোযাড়কে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন এবং সহযোগিতা করেছেন এবং করে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক গরিব পরিবারের ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের জন্য স্বর্ণ জয় করে আনছে। বিশেষ করে প্রতিবন্ধিরা স্পেশাল অলিম্পিকে স্বর্ণ জয় করছে। তারা দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে এ জন্য তারা যেন এসব প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে সে জন্য তাঁর সহযোগিতা রয়েছে। এ সময় যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রীড়া ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১০ জন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব এবং দু’টি সংস্থার মাঝে ‘শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার-২০২৩’ তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া সচিব ড. মহিউদ্দিন আহমেদ। এর আগে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট এবং একটি উদ্ধোধনী খাম প্রকাশ করেন। ১০ টাকা মূল্যমানের ডাকটিকিট, ৪০ টাকার তিনটি স্ট্যাম্প, ১০ টাকার উদ্ধোধনী খাম এবং ৫ টাকার ডাটা কার্ড সম্বলিত একটি স্যুভেনির শিট উম্মুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
লুৎফর রহমান, ঢাকা প্রতিনিধি