November 22, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

শুল্ককর বৃদ্ধিতে পাথর আমদানি বন্ধ, স্থবির বাংলাবান্ধা

সরকারিভাবে শুল্ককর বৃদ্ধির কারণে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে ভারতীয় পাথর আমদানি। অন্যদিকে প্রায় এক মাস ধরে ভুটান থেকে আসছে না পাথর। পাথর না আসার কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের চারদেশীয় স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।

স্থলবন্দরে গিয়ে জানা যায়, আগস্টের ১ তারিখ থেকে শুল্ককর বৃদ্ধিতে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। শুল্ক কর না কমানো পর্যন্ত তারা পাথর আমদানি করবেন না বলে জানিয়েছেন। পাথর নির্ভর এ বন্দরটিতে পাথর আমদানিতে রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। এভাবে পাথর আনা বন্ধ থাকলে সরকার রাজস্ব আয় থেকে পিছিয়ে পড়বে বন্দরটির থেকে।

বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুরে বন্দর ঘুরে দেখা যায়, স্থলবন্দরের ইয়ার্ডে কোন পণ্যবাহী গাড়ি নেই। পুরো বন্দর জুড়ে যেন শুনসান নিরবতা বিরাজ করছে। অলস সময় পার করছে শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ঢিলেঢালাভাবে চলছে ইমিগ্রেশনে যাত্রী পারাপার। পাথর সাইটগুলোতেও মেশিনে তেমন শ্রমিকদের কাজ করতে তেমন দেখা যায়নি।

স্থলবন্দরের পাথর ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বলছেন, বাংলাদেশ কাস্টমস বিদেশি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি টনে ১৩ ডলার নির্ধারণ করেছে। এতে করে ব্যবসায়ীদের আগের থেকে ৫০ টাকা হারে বেশি রাজস্ব দিতে হবে। এ হারে রাজস্ব বাড়ায় লোকসান গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের। তাই বাড়তি শুল্ক হার প্রত্যাহারে দাবিতে ১ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন তারা।

পাথর ব্যবসায়ীরা জানান, গত ১২ জুলাইয়ের পর থেকে ভারত ও ভূটানের মাঝে স্লট বুকিং ফি বাবদ চলা দ্বদ্ধে ২২ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত পাথর আমদানি চলে। আগস্টের ১ তারিখ থেকে শুল্ককর বৃদ্ধির কারণে প্রতিবন্ধকতা শিকার হয় দেশের এই চারদেশীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দরটি। এদিকে প্রায় এক মাস ধরে ভুটানের পাথর আসা বন্ধ রয়েছে।

শ্রমিক নেতা ইদ্রিস আলী জানান, দিন দিন বন্দরটি নতুন নতুন সমস্যা পড়ে শ্রমিকরা বিপাকে পড়েছে। গত ১২ জুলাই থেকে ভুটানের পাথর আসছে না। তার মধ্যে শুল্ককর বৃদ্ধির প্রত্যাহারের দাবিতে পাথর ব্যবসায়ীরা ১ আগস্ট থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন। সমস্যা দ্রুত সমাধান না হয় তবে শ্রমিকদের বড় ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। শ্রমিকদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষাসহ বন্দরটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শ্রমিক নেতারা।

সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের যুগ্ম আহবায়ক সাইদুর রহমান জানান, শুল্ক কর বৃদ্ধির কারণে ভারতীয় পাথর ও স্লট ফি বৃদ্ধির কারণে ভুটানের পাথর বন্ধ রয়েছে। ব্যবসায়ীদের রাজস্ব ফি বৃদ্ধির কারণে আমাদের পাথর আমদানীতে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তাই বাড়তি ১ ডলার এসএসমেন্ট প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রেখেছে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা ইমরুল হোসেন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘পূর্বের আমদানিতে টন প্রতি ১২ ডলার অ্যাসেসমেন্ট গ্রহণ করা হলেও নতুন করে সরকারি নির্দেশে গত ১ আগস্ট থেকে প্রতি টনে ভ্যালু এক ডলার বৃদ্ধি করে ১৩ ডলার করা হয়েছে। এতে করে ভ্যাটের পরিমাণ বেড়ে ৪১ টাকায় দাঁড়িয়েছে।’

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই খুদা মিলন বলেন, ‘গত ১ আগস্ট থেকে শুল্ক বিভাগ অ্যাসেসমেন্ট কর এক ডলার বাড়ানোর কারণে ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন। শুধু বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর নয়, একই অবস্থা শুরু হয়েছে বুড়িমারী, ভেমরা, সোনা মসজিদ ও হিলি স্থলবন্দরেও। বিষয়টি নিয়ে আমরা আজ (৯ আগস্ট) রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের সাথে বৈঠক হয়েছে। আশা করছি দু-তিন দিনের মধ্যে সমস্যা নিরসন হবে।’

বাংলাবান্ধা ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। বন্দরটি পাথর নির্ভরশীল হওয়ায় সরকার এখান থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে। তবে চলমান সমস্যায় চলতি অর্থবছরের যে লক্ষমাত্রা রয়েছে তা থেকে পিছিয়ে পড়ছে সরকার। আশা করি দ্রুত এই সমস্যা সমাধান হবে।’

পঞ্চগড় সংবাদদাতা

শেয়ার করুন: