December 18, 2024
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

র‍্যাবের গুম-খুন-অপহরণ: ক্ষমা চাইলেন ডিজি

র‍্যাবের বিরুদ্ধে গুম, খুন, অপহরণসহ বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত র‍্যাব দ্বারা নির্যাতিত ও সাত খুনসহ যারা হত্যার শিকার হয়েছেন তাদের পরিবার ও স্বজনদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি তদন্ত ও বিচারেই র‍্যাবের দায়মুক্তি সম্ভব। অন্য কোনো উপায়ে দায়মুক্তি সম্ভব না। আমরা বিচারের ভিত্তিতেই দায়মুক্তি চাই।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

এসময় র‍্যাব ডিজি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে র‍্যাব আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করে যাচ্ছে। আমি আপনাদের (গণমাধ্যম) ও দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, র‍্যাব তার দায়িত্ব আন্তরিকতা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবে।

তিনি বলেন, র‍্যাবের বিরুদ্ধে গুম, খুন, অপহরণসহ বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। সৃষ্টির পর থেকে এখন পর্যন্ত র‍্যাব দ্বারা নির্যাতিত, অত্যাচারিত ও নারায়ণগঞ্জের সাত খুনসহ যারা হত্যার শিকার হয়েছেন তাদের পরিবার ও স্বজনদের কাছে আমরা দুঃখপ্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করি। এসমস্ত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে সুষ্ঠু বিচার প্রত্যাশা করছি। অন্তর্বর্তী সরকার গুম খুন কমিশন গঠন করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ সংক্রান্ত অভিযোগের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আমরা আশা করবো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে র‍্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত ও অবিচার হবে। আমরা মনে করি তদন্ত ও বিচারেই র‍্যাবের দায়মুক্তি সম্ভব। অন্য কোনো উপায়ে দায়মুক্তি সম্ভব না।

বক্তব্যের শুরুতেই তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদদের ও সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। গত জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন এবং যারা আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসারত আছেন তাদের সুস্থতা কামনা করেন।

তিনি আরও বলেন, র‌্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে ২০০৪ সালের জন্মলগ্ন থেকে চরমপন্থি, জলদস্যু ও সন্ত্রাস দমন, মাদকবিরোধী কার্যক্রম, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, কিশোর গ্যাং নির্মূল, সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা এবং চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের আসামি গ্রেফতারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অস্ত্র ব্যবসায়ী, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে র‌্যাব নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৫০০ এর অধিক আসামি গ্রেফতার এবং ২০ হাজারের অধিক বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠা থেকে এ পর্যন্ত আনুমানিক ৬ হাজার ২৯২ কোটি ৫ লাখ টাকা মূল্য মানের মাদকদ্রব্য উদ্ধারসহ দেড় লাখ অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে ২৩টির বেশি মামলার আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী রাজধানীর পিচ্চি হান্নান, টেকনাফের নয়াপাড়ার সন্ত্রাসী জকির, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের লম্বু মোশারফ, শীর্ষ সন্ত্রাসী কবির, ডাকাত শহীদ, শীর্ষ সন্ত্রাসী শাকিল মাজাহার, হত্যা ও অপহরণ মামলাসহ মোট ১৫টি মামলার আসামি খোকনসহ দেশের তালিকাভুক্ত বেশ কয়েক জন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র‌্যাব।

র‌্যাবের তত্ত্বাবধানে ২০২৩ সালের ২১মে দেশের বিভিন্ন জেলার ৩১৪ জন চরমপন্থির সদস্য বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করে।

আত্মসমর্পণকৃত চরমপন্থি সদস্য ও তাদের পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি ‘উদয়ের পথে’ নামক পাইলট প্রোগ্রামের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে র‌্যাব।

সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত করতে র‌্যাবের টানা অভিযানের ফলে ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন জলদস্যু বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করায় গত ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হয়। আত্মসমর্পণ করা জলদস্যু ও তাদের পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি সুন্দরবনের হাসি নামক প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং সুন্দরবনের দুবলার চরে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করেছে র‌্যাব।

শেয়ার করুন: