রাশিয়া ইউরোপের কোনো দেশেই হামলা করবে না: আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী
রাশিয়া ইউরোপের অন্য কোনো দেশে হামলা করবে না বলে মন্তব্য করেছেন আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এদি রামা। তার মতে, সামরিক জোট ন্যাটো যেকোনো ধরনের আগ্রাসন মোকাবিলায় প্রস্তুত।
এছাড়া পশ্চিমা দেশগুলোর উদ্বেগকে তুচ্ছ বলে উল্লেখ করে রামা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এখন উচিত ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে একটি বাস্তবসম্মত শান্তি পরিকল্পনা তৈরি করা।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গত মাসের শেষের দিকে বার্লিন গ্লোবাল ডায়ালগ সম্মেলনের ফাঁকে আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রামা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, “ইইউ বা ন্যাটোর কোনো সদস্য রাষ্ট্রকে আক্রমণ করা একেবারেই নির্বুদ্ধিতার কাজ হবে। রাশিয়া আলবেনিয়ায় হামলা করবে না, ইউরোপের অন্য কোনো দেশেও না।”
তিনি আরও বলেন, “ন্যাটো যেকোনো আগ্রাসনের জন্য প্রস্তুত। ভয় পাওয়ার কিছু নেই— এখন পর্যন্ত এটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক জোট।”
ইইউয়ের ২৭ সদস্য দেশের মধ্যে ২৩টি ন্যাটোর সদস্য। আলবেনিয়া ন্যাটোর সদস্য এবং ২০১৪ সাল থেকে ইইউ প্রার্থী দেশ হিসেবে রয়েছে। রামা বলেন, “রাশিয়া নিয়মিতভাবে ইইউকে উসকানি দিচ্ছে। রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশগুলো প্রতিদিন নানা ধরনের উসকানি মোকাবিলা করছে… ইইউ নিজেকে রক্ষা করছে এবং আরও শক্তভাবে রক্ষার পরিকল্পনা করছে।”
গত সেপ্টেম্বরে পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, নরওয়ে ও রোমানিয়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে সন্দেহভাজন ড্রোন অনুপ্রবেশের অভিযোগ তোলে। ১৯ সেপ্টেম্বর ন্যাটো জানায়, তারা এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় ঢুকে পড়া তিনটি রুশ মিগ–৩১ যুদ্ধবিমানকে আটকায়। তবে মস্কো অভিযোগটি অস্বীকার করেছিল।
জার্মান গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মার্টিন ইয়াগার গত মাসে সংসদ সদস্যদের সতর্ক করে বলেন, রাশিয়া ইউরোপে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে, তবে ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি সামরিক সংঘাতে যেতে চায় না।
অবশ্য রাশিয়া এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ইউরোপীয় দেশগুলো অকারণে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।
রামার সরকার রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের তীব্র সমালোচক এবং মস্কোর বিরুদ্ধে ইইউর নিষেধাজ্ঞাকেও সমর্থন করে। তবে আল জাজিরাকে তিনি বলেন, “ইইউ এখনো কোনো শান্তি পরিকল্পনা তৈরি করেনি, এটি আমার কাছে খুবই অদ্ভুত লাগে।”
প্রধানমন্ত্রী রামার মত, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন রাশিয়া–ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নিচ্ছেন, তখন ইউয়েরও উচিত নিজেদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো এবং নিজেদের শান্তির দৃষ্টিভঙ্গি সামনে আনা।
তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় নেতাদের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে সংলাপের উপায় খুঁজে বের করা, যাতে যুদ্ধের অবসান সম্ভব হয়।
এর আগে গত সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, তিনি এখনো ইউরোপীয় কোনো শান্তি পরিকল্পনা দেখেননি।
এদিকে রামা জানান, আলবেনিয়ায় এখনো রুশ ড্রোন দেখা যায়নি এবং দেশটি কোনো নিরাপত্তা হুমকি অনুভব করছে না। তার ভাষায়, “আমি একজন আলবেনীয়। আমাদের কোনো ভয় নেই… আলবেনিয়ায় রুশ শত্রুতার জায়গা নেই, কারণ এখানে রাশিয়ার প্রতি কোনো সহানুভূতিও নেই।”
রাশিয়া আগে থেকেই ইউরোপে তথাকথিত ‘হাইব্রিড যুদ্ধ’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। হাইব্রিড যুদ্ধে সাধারণত সাইবার হামলা, ভুয়া তথ্য প্রচার বা বিভ্রান্তি তৈরির মতো পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতে, সাম্প্রতিক ড্রোন অনুপ্রবেশও সেই কৌশলেরই অংশ।

