রাতভর বৃষ্টিতে প্লাবিত কলকাতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু ৮ জনের
রাতভর টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা। সোমবার রাত বারোটার পর থেকে ছয়ঘণ্টা ধরে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে শহরটিতে।
এতে প্রায় গোটা কলকাতা শহর পানির তলায় চলে গেছে। আর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে আট জনের। কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ১৫০ থেকে ৩৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
এর মধ্যে গড়িয়ার কামডহরিতে ৩৩২ মিলিমিটার, যোধপুর পার্কে ২৮৫, কালীঘাটে ২৮০, তপসিয়ায় ২৭৫, চেতলায় ২৬২, মানিকতলায় ১৪৭ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। গোটা কলকাতায় গড়ে বৃষ্টি হয়েছে ২৫১ মিলিমিটারের মতো। ১৯৭৮ সালের পর থেকে এত বৃষ্টি সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের পর কখনো হয়নি বলে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে।
উল্টোডাঙা, কাঁকুড়গাছি, সল্টলেক, বেহালা, বালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট, গড়িয়া, কসবা, যাদবপুর, আলিপুর, ভবানীপুর, সন্তোষপুর, মানিকতলা, তপসিয়া, বড়বাজারসহ কলকাতার বহু এলাকা এখন পানির নিচে। রাজভবনের পাশ থেকে শুরু করে রাইটার্স বিল্ডিং পর্যন্ত পুরো এলাকা পানির নিচে। কলকাতা হাইকোর্টে যাওয়ার রাস্তাও এখন জলমগ্ন।
দুপুর বারোটাতেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। উত্তর থেকে দক্ষিণ, মধ্য থেকে পূর্ব কলকাতা এবং শহরতলি সব জায়গায় পানি জমে আছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সব পরীক্ষা বাতিল করেছে।
নেতাজিনগর থেকে ইন্দ্রনীল রায় জানাচ্ছেন, তার বাড়ির সামনে এক ফলওয়ালা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। ফল ব্যবসায়ী প্রশান্ত কুণ্ডু তার দোকানে এসেছিলেন। সাইকেল রাস্তায় বিদ্যুতের খুঁটিতে রাখতে যান এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরে একটি কুকুর সেই সাইকেলে চড়তে যায়। কুকুরটিও মারা গেছে।
মোমিনপুর থেকেও একজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। তার নাম জিতেন্দ্র সিং। গড়ফা, কালিকাপুরেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মনুষ মারা গেছেন। হরিদেবপুর, অভিষিক্তা মোড়সহ বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মানুষ মারা গেছেন।
যত সময় যাচ্ছে, ততই বিভিন্ন জায়গা থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মানুষের মৃত্যুর খবর আসছে।
বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী সামাজিক মাধ্যমে বলেছেন, মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু এই দুর্দশার জন্য দায় কার। কলকাতা ও বিধাননগরের মেয়রদের অদক্ষতা ও উদাসীনতার ফল মানুষকে ভোগ করতে হয়।
হাওড়া, শিয়ালদহ, চিৎপুরে কারশেডে পানি জমে গেছে। পানি জমার কারণে শিয়ালদহ মেন, বনগাঁ শাখায় ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত। দমদম স্টেশনে ট্রেন আসতেই পারছে না। সেখানে বারবার ঘোষণা করা হচ্ছে, যখন ট্রেন ঢুকতে পারবে, তখন তা শিয়ালদহের দিকে যাবে। পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে তা বলা যাচ্ছে না।
হাওড়াতেও বৃষ্টির কারণে ট্রেন চলাচল অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। কলকাতা মেট্রো রেলের কয়েকটি স্টেশনে পানি ঢুকে গেছে। ফলে মেট্রো চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে।
কলকাতা থেকে ডিডব্লিউর প্রতিনিধি শময়িতা চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, “বেহালায় প্রায় হাঁটুপানি। এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। সারারাত প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। বাসা-বাড়ির ভেতরে পানি জমেছে। গাড়ির চাকা পানিতে ডুবে আছে।”
দেবযানী লাহা ঘোষও বলেছেন, উত্তর কলকাতায় তার বাড়িতেও প্রথমবার পানি জমেছে।
অধ্য়াপক উত্তরা রায় ডিডব্লিউকে জানিয়েছেন, “রাজাবাজার ট্রামডিপোর কাছে ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশন কলেজে প্রচুর পানি জমেছে। তাই কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিটিরোডও পানির তলায়।”
সল্টলেক থেকে অধ্যাপক সুব্রত হোড় জানিয়েছেন, “সল্টলেকে পানি জমেছে। সকালে সেই পানি কিছুটা নেমে গেলেও রাস্তার দুই ধার পানিতে ভর্তি। অনেক বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে।”
অনির্বাণ মাইতি জানিয়েছেন, তিনি এয়ারপোর্টে থাকেন। কাজের জন্য আসতে হবে টালিগঞ্জে। আজই তাকে জরুরি কাজ শেষ করতে হবে। তিনি জানেন না কী করে গন্তব্যে পৌঁছাবেন।
মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, পৌরসভা পানি বের করার চেষ্টা করছে। কিন্তু গঙ্গায় পানি বেড়ে গেছে। গঙ্গা ও বিভিন্ন খালে পানি ফেললে ব্যাক ফ্লো হচ্ছে। বহু জায়গায় বিদ্যুতের মিটার ডুবে গেছে। ফ্রিজ ডুবে গেছে। তাই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। মানুষ খুব কাজ না থাকলে যেন বাইরে না বের হন।
ফিরহাদ বলেছেন, এটা মেঘফাটা বৃষ্টি। তিনি জীবনে কখনো এত বৃষ্টি কলকাতায় দেখেননি। তিনি বলেছেন, লকগেট খোলার পরেও ব্যাক ফ্লো করে পানি চলে আসছে। তার দাবি, পৌরসভার পোস্ট থেকে কেউ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়নি।
এদিকে প্রবল বৃষ্টিতে অনেক পূজামণ্ডপেই পানি থই থই অবস্থা। অনেকগুলো মণ্ডপের ক্ষতি হয়েছে। মাঠে পানি জমে গেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আরো বৃষ্টি হবে। পূজার দিনগুলোতেও বৃষ্টি হতে পারে।