রাজনৈতিক দলগুলির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী ও জনগণের উদ্বেগ প্রসঙ্গে
প্রতিবার নির্বাচনের সময় মানুষ শঙ্কায় থাকে। তাঁদের মনে উদ্বেগ, উৎকন্ঠা তৈরি হতে থাকে। নানান প্রশ্নের আবর্তে ঘুরতে থাকে তাঁদের চিন্তা; কারণ অ্যারিস্ট্রোটল বলেছেন মানুষ মূলত একটি রাজনৈতিক প্রাণি, তাঁকে যতই রাজনীতি থেকে আলাদা করা হোক, বিমুখ করা হোক, সে রাজনৈতিক চিন্তা ও কর্ম না করে থাকতে পারে না। সুতরাং মানুষ চিন্তা করে।
আর যখনই বাংলাদেশে মানুষ চিন্তা করে, তখনই তাঁদের চিন্তাটি দুশ্চিন্তায় পর্যবসিত হয়। তখনই তাদের উদ্বেগ, উৎকন্ঠা চরমে ওঠে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা যতই বলা হোক সীমিত ও সংকুচিত; ঘরোয়া আলাপে, চায়ের কাপে, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁরা রাজনৈতিক আলাপে পরিব্যপ্ত হয়ে যান। নিজেদেরকে তারা প্রশ্ন করতে থাকেন, বিরোধীদলগুলি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি? নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি? বিরোধী জোট ও সরকারের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলাপআলোচনা হবে কি? সে সূত্রে, শেষপর্যন্ত, কোনো সমঝোতা? নাকি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি কোনো সহিংস আন্দোলন শুরু করবে এবং তারা রাজপথে মুখোমুখি হয়ে পড়বে? এভাবে পাল্টাপাল্টি করতে করতে এক পর্যায়ে কি তারা ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ চলে যাবে? তখন তৃতীয় কোনো শক্তি ২০০৬ সালের মত রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসিন হবে?
এইরকম প্রশ্ন ও উদ্বেগ সবসময়ই ছিল, কিন্তু গতকাল বিএনপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচীর পাল্টা একটি কর্মসূচী আওয়ামীলীগ ঘোষণা করে দিলে, জনমানুষের উদ্বেগ শঙ্কায় রুপ নেয়। তবে সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপা যে, গতকাল তীব্র সহিংস কোনো ঘটনা ঘটেনি। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া, সার্বিক পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ ছিল।
আমরা রাজনৈতিক দলগুলির এই শিষ্ট,পরিপক্ক আচরণকে সাধুবাদ দেই। আমরা আশাকরি, ভবিষ্যতেও, দলগুলি রাজনৈতিক আচরণে এরকম পরিপক্কতার পরিচয় দেবে। তাঁরা অতিতে পড়ে না থেকে, সামনে এগিয়ে যাবে। নিজেদেরকে তারাঁ ২১ শতকের ইনফর্মড, কমপিটেন্ট পলিটিশিয়ান করে তুলবেন। কাদাছোড়াছুড়ির সংস্কৃতিকে তারা পেছনে ফেলে, অপরকে দোষ না দিয়ে নিজেদের কৃতকর্মকে আয়নায় ফেলে পর্যবেক্ষণ করবেন। তারা এখন থেকে শান্তিপূর্ণ সহবস্থানে প্রবৃত্ত হবেন। সর্বোপরি রাজনীতি বিদেশীদের হাতে তুলে না দিয়ে, নিজেদের হাতে রাখতে পারার মত সক্ষমতা অর্জন করবেন। সত্যি কথা বলতে কি, ইনফর্মড, সহনশীল আচরণের কোনো বিকল্প নেই। কারণ নিজেদের মধ্যে হৃত হয়েছে যে সংহতি, সেটা তাদেরকেই ফিরিয়ে আনতে ও প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা মনে করি, খুব সতর্কতার সাথে, আওয়ামীলীগকে প্রমাণ করতে হবে তারা রাষ্ট্রদন্ড নিয়ে আর ঝাঁপিয়ে পড়বে না। পাশাপাশি, বিএনপিকেও প্রমাণ করতে করতে হবে যে, তাঁরা জ্বালাও পোড়াওতে বিশ্বাস করে না।
- দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল যতক্ষণ পর্যন্ত সংহতি ফেরাতে না পারছে, মনে রাখতে হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিদেশীরা আসবেই। তাদেরকে দোষ দেওয়া নিরর্থক। রাজনীতিতে বিদেশীদেরকে অপ্রাসঙ্গিক করতে তুলতে হলে রাজনীতিবিদদেরই সক্রিয় হতে হবে। তাঁদের সহনশীল ও পরিপক্ক হতে হবে। আত্মমর্যাদার পাঠ অন্যের কাছ থেকে নেয়া যায় না। সেটা নিজেদের মধ্যে নিজেদেরকেই আনতে হয়।