রাজনীতিতে সময়োপযোগী জেশ্চার
রাজধানীর গাবতলীতে অবস্থান কর্মসূচি থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। এ সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে আমানকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার (২৯ জুলাই) দুপুর ২টা ১০ মিনিটের দিকে অসুস্থ আমানকে দেখতে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে আসেন প্রধানমন্ত্রীর একটি প্রতিনিধি দল। তারা বিএনপি নেতাকে প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো দুপুরের খাবার, বিভিন্ন প্রকার মৌসুমী ফল ও জুসের বুকেট তুলে দেন। প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (রাজনীতি) গাজী হাফিজুর রহমান লিকু। সাক্ষাৎ শেষে তিনি জানান, আমানউল্লাহ আমানকে উন্নত চিকিৎসা প্রদান করতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গাজী হাফিজুর রহমান আমানউল্লাহ আমানকে জানান, প্রধানমন্ত্রী আপনার জন্য এ সকল খাবার, ফল ও জুস পাঠিয়েছেন এবং আপনার স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর জানতে চেয়েছেন। তিনি আপনার দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন। চিকিৎসার জন্য দেশের ভেতরে অন্য যে কোনো হাসপাতালে যেতে চাইলে তারও ব্যবস্থা করে দেবেন প্রধানমন্ত্রী। আমানউল্লাহ আমান প্রধানমন্ত্রীর এসকল উপহার গ্রহণ করেন এবং মানবতা ও রাজনৈতিক শিষ্টাচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
অপর এক খবরে প্রকাশ, রাজধানীর ধোলাইখালে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে পুলিশ কর্তৃক তুলে নেয়ার পর তাঁকে প্রথমে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন বিএনপির এ নেতা। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আপ্যায়নের জন্য উন্নতমানের খাবার আনা হয়। খাবারের তালিকায় ছিল খাসি, মুরগির মাংস, একাধিক মাছের তরকারি, রোস্ট ও সবজি। এছাড়া ফলের মধ্যে ছিল আম, মালটা, আঙ্গুর ও ড্রাগন। যে সমস্ত ছবি পত্র পত্রিকায় বেরিয়েছে, তাতে দেখা যায় ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের সঙ্গে তিনি এক টেবিলে আহার করছেন। একটি সূত্র হতে জানা যায়, খাওয়ার এক পর্যায়ে গয়েশ্বরকে নিজের হাতে ভাত তুলে দেন ডিবি প্রধান হারুন। শেষে একটি গাড়িতে করে তাকে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়।
দেশে অস্থির পাল্টাপাল্টির যে রাজনীতি শুরু হয়েছে, তার মধ্যে আমরা এদুটি ঘটনাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করতে চাই। মানুষ যখন শঙ্কায় প্রতিটি মুহুর্ত পার করছেন, দুশ্চিন্তা যখন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না, তখন, উপরোক্ত এ দুটি ঘটনা যেন আমাদেরকে হতাশার মধ্যে আশার বাণী শোনাচ্ছে। যে কোনো অধিকার আদায়ের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ পথে হলে সেটি প্রশংসারতো বটেই, সৌন্দর্যমন্ডিতও। কিন্তু সবসময় রাজনৈতিক দলের কর্মীগণ সেটি করতে পারেন না। ক্ষমতাসীনরা যেমন ক্ষমতার দম্ভে অনেক কিছুকে আমলে নিতে চান না, বিরোধীগণও সঙ্গতকারণে, অনন্যপায় হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে তারা সহিংস হয়ে উঠতে থাকেন। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে এ এক পরিচিত রাজনৈতিক কালচার। কিন্তু আর কত! ফিফটি প্লাস দেশের বয়স। আমাদেরকে এই অচল কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিরোধীদেরকে যেমন দায়িত্বশীলতা ও ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে, ক্ষমতাসীনদেরও তেমনি সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে সদাচার দেখাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। আশা করি বিরোধীগণও তাঁদের কর্মীদেরকে শান্তিপূর্ণ রাখতে সচেষ্ট হবেন। রাজপথে লড়াই করুন, অধিকার আদায় করুন, সব ঠিক আছে কিন্তু জ্বালাও পোড়াও আর নয়। সংশ্লিষ্ট সকলকে আমরা সতর্ক থাকার আহবান জানাই। মনে রাখতে হবে এই দেশটি আমাদের সবার।