November 21, 2024
আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এবার

আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই লড়াইয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লড়ছেন ডেমোক্রেট কমালা হ্যারিস ও রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

দুই প্রার্থীর মধ্যে লড়াইটা যে বেশ হাড্ডাহাড্ডি হবে- তার ইঙ্তি পাওয়া গেছে বিভিন্ন জরিপেই। খবর রয়টর্স, এবিসি ও বিবিসির।

নির্বাচনে ফল নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনি এলাকা বলে পরিচিত রাজ্যগুলোতে তাদের হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলেই আভাষ মিলছে। তাই শেষ সময়ের প্রচারণায় ব্যস্ত কমালা হ্যারিস, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাদের সহযোগীরা।

পুরো শক্তি নিয়ে এখন প্রচারণায় সময় কাটাচ্ছেন তারা। টেক্সাসে কমালা হ্যারিসের ভোট বাড়াতে বিখ্যাত সংগীতশিল্পী বিয়োন্সে নোয়েলস, ডেসটিনিস চাইল্ড ব্যান্ডমেট কেলি রাউল্যান্ড এবং কান্ট্রি সিঙ্গার উইলি নেলসন সবাই তাদের তারকা খ্যাতিকে ব্যবহার করছেন।

অন্যদিকে ডনাল্ড ট্রাম্প জো রোগানের তিন ঘণ্টার পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে ব্যস্ত ছিলেন। তা শেষ করে তিনি ছুটে যান মিশিগানে। সেখানে বিলম্বে উপস্থিত হন তিনি। এতে সমাবেশে জনতার সংখ্যা অনেক কমে যায়।

এবারের নির্বাচনে কে বিজয়ী হবেন, তা নিয়ে বড় রকম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রভাবশালী নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং সিয়েনা কলেজ ২০ থেকে ২৩শে অক্টোবর পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে সর্বশেষ যে জরিপ চালিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে- কমালা এবং ট্রাম্প সমানে সমান।

গড়ে শতকরা ৪৮ ভাগ মানুষ দু’জনকেই সমর্থন করছেন। অন্যদিকে শতকরা ৪ ভাগ ভোটার কাকে ভোট দেবেন সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তহীন।

নারী ভোটারদের মধ্যে কমালাকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৫৪ ভাগ, ট্রাম্পকে শতকরা ৪২ ভাগ। কিন্তু পুরুষ ভোটারদের দিক দিয়ে বেশ এগিয়ে গেছেন ট্রাম্প। পুরুষরা শতকরা ৫৫ ভাগ সমর্থন করছেন তাকে। কমালাকে সমর্থন করছেন শতকরা ৪১ ভাগ।

১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী ভোটারদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সমর্থন পেয়েছেন কমালা। এর পরিমাণ শতকরা ৫৫ ভাগ, ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এই হার শতকরা ৪৩।

অন্যদিকে ৪৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী ভোটারদের মধ্যে শতকরা ৫১ ভাগ ট্রাম্পকে এবং কমালাকে শতকরা ৪৪ ভাগ সমর্থন করছেন। কমালার জন্য উদ্বিগ্ন  হওয়ার মতো তথ্য হলো জরিপে অংশ নেয়া শতকরা ৬১ ভাগ মানুষ বলেছে, দেশ ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। অন্যদিকে শতকরা ২৭ ভাগ বলেছে, দেশ সঠিক পথেই আছে।

ফাইভ থার্টি এইট জরিপকারী সংস্থা জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন জরিপ নিয়ে তার গড় করে থাকে। তাদের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, কমালা হ্যারিস খুব সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন।

তাকে সমর্থন করছেন শতকরা ৪৮ ভাগ ভোটার। ট্রাম্পকে শতকরা ৪৬.৬ ভাগ। ফলে শতকরা ১.৪ ভাগ সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আছেন কমালা।

তবে এই ব্যবধান এ সপ্তাহের শুরুতে যা ছিল তার চেয়ে কম। সপ্তাহের শুরুতে এই হার ছিল শতকরা ১.৮ ভাগ। জাতীয় পর্যায়ে এসব জরিপ ভোটারদের সেন্টিমেন্ট সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য দেয়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন ইলেকটোরাল ভোটে।

প্রতিটি রাজ্য থেকে একজন প্রার্থী কতটি ইলেকটোরাল ভোট পেলেন তা নির্ধারণ করবে ফল। তাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাতটি সুইং স্টেট। এগুলো হলো- অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভ্যানিয়া ও উইসকনসিন।

এই সাতটি রাজ্যে মোট ৯৩টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট আছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে একজন প্রার্থীকে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতে হয়। সেই হিসাবে প্রয়োজনীয় সেই ২৭০ ভোটের এক তৃতীয়াংশ ইলেকটোরাল ভোট আছে ওই সাত রাজ্যে।

ফাইভ থার্টি এইটের সর্বশেষ গড় হিসাবে নর্থ ক্যারোলাইনাতে শতকরা এক পয়েন্টে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। অ্যারিজোনা ও জর্জিয়াতে তিনি শতকরা ২ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। মিশিগান, নেভাদা, পেনসিলভ্যানিয়া, উইসকনসিনে শতকরা ০.৫ ভাগ ব্যবধান কমালা ও ট্রাম্পের মধ্যে। খুব কম ব্যবধানে পেনসিলভ্যানিয়া ও নেভাদায় এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। মিশিগান ও উইসকনসিনে অল্প ব্যবধানে এগিয়ে কমালা।

এমন কঠিন পরিস্থিতিতে কমালার পক্ষে শুক্রবার টেক্সাসের হাউসটনে প্রচারণা চালিয়েছেন বিয়োন্সে নোয়েলস, কেলি রাউল্যান্ড এবং উইলি নেলসন। সেখানে গর্ভপাতের অধিকারের প্রতি সমর্থন জোরালো করেছেন কমালা। এতে নারী ভোটারদের বেশ সমর্থন পেয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সাল থেকে কোনো ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে সমর্থন করেনি টেক্সাস। এই রাজ্যে আছে মোট ৪০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। ফলে এই ভোটগুলো ট্রাম্পের পকেটেই যাবে বলে মনে হচ্ছে। তাই বলে হাল ছেড়ে দেয়নি ডেমোক্রেটরা। এই রাজ্যটিতে গভর্নর রিপাবলিকান গ্রেগ অ্যাবোট।

তার অধীনে এই রাজ্য গর্ভপাতবিরোধী কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ফলে গর্ভপাতের অধিকারে সমর্থন দেয়া কমালার জন্য খুব বেশি সংবাদ নাও মিলতে পারে এখানে। অন্যদিকে শুক্রবার টেক্সাসে প্রচারণা চালিয়েছেন ট্রাম্প। সেখানে অস্টিনে থেকে ‘দ্য জো রোগান এক্সপেরিয়েন্স’ প্রোগ্রামের রেকর্ড সম্পন্ন করেছেন। রোগান হলো যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় পডকাস্টার।

তার রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাখ লাখ অনুসারী। তার বেশির ভাগই পুরুষ। শুধু ইউটিউবে রোগানের পডকাস্টের সাবস্ক্রাইবার এক কোটি ৭৫ লাখ। স্পোটিফাইয়ে এক কোটি ৪০ লাখ। তার শ্রোতাদের গড় বয়স ২৪ বছর।

রোগানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আরও একবার বলেছেন, তিনি আয়কর ট্যাক্স নির্মূল করার পক্ষে। এতে যে রাজস্ব ক্ষতি হবে তা তিনি শুল্ক দিয়ে পুষিয়ে নিতে চান। এখান থেকে মিশিগানের ট্রাভার্স সিটিতে এক র‌্যালিতে যোগ দেন ট্রাম্প। সেখানে বিপুল পরিমাণ আরব মার্কিন জনসংখ্যা। তারাই নির্বাচনের ফল অনেক বেশি প্রভাবিত করবেন।

আরব মার্কিনিদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন শতকরা ৪৫ ভাগ, কমালার ৪৩। আরব নিউজ/ইউগভ জরিপ প্রকাশ হয়েছে সোমবার। এতে দেখা গেছে, গাজা, লেবাননে ইসরাইলের যুদ্ধে দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দেয়ার কারণে বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ আরব জনগোষ্ঠী।

ফলে তাদের বড় অংশ কমালা হ্যারিসের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। ট্রাম্প বলেন, মিশিগানে আরব ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর কাছে কমালা পুরোপুরি ধরাশায়ী হচ্ছেন।

উল্লেখ্য, কমালা হ্যারিসের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন সাবেক রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান লিজ চেনি। ট্রাম্পের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের বিরোধ। লিজ চেনি হলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির কন্যা। ২০০৩ সালে ইরাকে যে আগ্রাসন চালানো হয়েছে তার কেন্দ্রীয় চরিত্রের অন্যতম ডিক চেনি।

এ প্রসঙ্গে তীর্যক বাক্য ছোড়েন ট্রাম্প। তিনি সমবেতদের কাছে জানতে চান- কমালা হ্যারিস যখন মুসলিমবিদ্বেষী লিজ চেনির সঙ্গে আটঘাট বেঁধেছেন তখন মুসলিমরা কেন কমালাকে সাপোর্ট দেবেন?

শেয়ার করুন: