যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন, বন্ধ হচ্ছে ‘গোল্ডেন টিকিট’
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য দীর্ঘদিনের সুরক্ষা ও বিভিন্ন সুবিধায় বড় ধরনের কাটছাঁট করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। এর ফলে ‘গোল্ডেন টিকিট’ সুবিধা বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি আশ্রয়প্রার্থীদের সুরক্ষা কমছে অর্ধেকের বেশি।
এছাড়া শরণার্থীদের জন্য আনা হচ্ছে নানা নতুন নিয়ম। ডেনমার্ক মডেল অনুসরণে নেওয়া এই কঠোর পরিকল্পনাকে অভিবাসন ইস্যুতে চাপে থাকা স্টারমার সরকারের বড় নীতিগত পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রোববার (১৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য দীর্ঘদিনের বিশেষ সুবিধা — অনেকে যাকে ‘গোল্ডেন টিকিট’ বলতেন — বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্যের সরকার। অনিয়মিত অভিবাসন কমানো এবং ডানপন্থি রাজনীতির চাপ মোকাবিলাই এই বড় নীতিগত পরিবর্তনের লক্ষ্য।
ডেনমার্কের কড়াকড়ির মতো মডেল অনুসরণ করে নেওয়া এই পদক্ষেপ শনিবার রাতে ঘোষণা করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সরকার। অভিবাসনবিরোধী দল রিফর্ম ইউকের বাড়তি জনপ্রিয়তার মুখে ব্রিটিশ সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাবানা মাহমুদ বলেন, “আমি আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য যুক্তরাজ্যের বিশেষ সুবিধার অবসান ঘটাব”। তার দপ্তর হোম অফিস এই প্রস্তাবকে “আধুনিক যুগে আশ্রয় নীতির সবচেয়ে বড় সংস্কার” হিসেবে বর্ণনা করেছে। এ বিষয়ে তিনি সোমবার পার্লামেন্টে বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
এদিকে যুক্তরাজ্যের রিফিউজি কাউন্সিল সরকারকে সতর্ক করে বলেছে, অভিবাসনে এই ধরনের কড়াকড়ি মানুষকে দেশটিতে পৌঁছানোর চেষ্টায় নিরুৎসাহিত করবে না, বরং সরকারের উচিত নীতি পুনর্বিবেচনা করা।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান এনভার সলোমন বলেন, “যেসব শরণার্থী কঠোর পরিশ্রম করে ব্রিটেনের জন্য অবদান রাখেন, তাদের যেন এখানে স্থায়ী ও নিরাপদ জীবন গড়ার সুযোগ দেওয়া হয়।”
বর্তমানে শরণার্থী মর্যাদা পাওয়া ব্যক্তিরা পাঁচ বছর পর স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি এবং পরবর্তীতে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। নতুন নিয়মে এই মেয়াদ কমিয়ে ৩০ মাস করা হবে এবং তা নিয়মিত পর্যালোচনা করা হবে। পরিস্থিতি ‘নিরাপদ’ হলে তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।
এ ছাড়া যাদের আশ্রয় দেওয়া হবে, তাদের যুক্তরাজ্যে দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের আবেদন করতে অপেক্ষা করতে হবে ২০ বছর।
আল জাজিরা বলছে, ব্রিটেনে বর্তমানে আশ্রয় দাবির হার রেকর্ড উচ্চতায়। জনমত জরিপ বলছে, অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে অভিবাসন এখন ভোটারদের প্রধান উদ্বেগ। শেষ এক বছরে যুক্তরাজ্যে ১ লাখ ৯ হাজার ৩৪৩ জন আশ্রয়ের আবেদন করেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি এবং ২০০২ সালের সর্বোচ্চ রেকর্ডেরও বেশি।
ব্রিটেনের হোম অফিস বলছে, নতুন নীতিগুলো অনিয়মিত অভিবাসী ও শরণার্থীদের জন্য যুক্তরাজ্যকে কম আকর্ষণীয় করবে এবং যাদের ফেরত পাঠানো প্রয়োজন, তা সহজ হবে। এছাড়া ২০০৫ সালের আইনে আশ্রয়প্রার্থীদের সহায়তা দেওয়ার যে বাধ্যবাধকতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, সেটিও বাতিল করা হবে।
ফলে আশ্রয়প্রার্থীদের বাসস্থান বা নিয়মিত ভাতা পাওয়ার আর নিশ্চয়তা থাকছে না। এটা সরকার চাইলে সহায়তা বন্ধ করে দিতে পারবে— বিশেষত যাদের সক্ষম মনে হবে বা অপরাধে জড়িত থাকবে তাদের জন্য।
মূলত গত বছর নির্বাচিত স্টারমার ইংলিশ চ্যানেল হয়ে ছোট নৌকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে পৌঁছানো অভিবাসীদের ঠেকাতে বেশ চাপেই আছেন। যদিও তার আগের কনজারভেটিভ নেতারাও অভিবাসীদের এই চাপ সামলাতে পারেননি।
এ বছর এখন পর্যন্ত এভাবে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে দেশটিতে ঢুকেছে ৩৯ হাজারেরও বেশি মানুষ— যা ২০২৪ সালের পুরো বছরের চেয়েও বেশি।

