মুন্সিগঞ্জে জামাতুল আনসারের ৩ জনের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার তিন জঙ্গি নেতার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শুনানি শেষে মুন্সিগঞ্জ আমলি আদালত-৬-এর বিচারক জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাজনিন আক্তার এ আদেশ দেন।
আসামিরা হলেন জামাতুল আনসারের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ (৩২), কাজী সিরাজ উদ্দিন (৩৪) ও মাহফুজুর রহমান ওরফে বিজয় (২৮)।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছিল পুলিশ। সন্ধ্যা পর্যন্ত শুনানি চলার পর আজ আবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে জঙ্গিদের কারাগারে পাঠান আদালত।
মুন্সিগঞ্জ আদালতের পুলিশ পরিদর্শক জামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দেশের আর কোথায় তাঁদের জঙ্গি সদস্যরা আছেন, তাঁদের কার্যক্রম ও পরিকল্পনা জানতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতের কাছে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছিলেন। আদালত শুনানি শেষে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। পুলিশ যেকোনো দিন তাঁদের রিমান্ডে নিতে পারবে।
গত শুক্রবার মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বড় নওপাড়া এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকার কথা বলে ছয় হাজার টাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন জঙ্গিরা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে গত সোমবার ভোরে এই তিন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১০-এর একটি দল। এ সময় জঙ্গিদের কাছ থেকে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, উগ্রপন্থী বই ও টাকা উদ্ধার করা হয় বলে দাবি করে র্যাব। পরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, জঙ্গি সংগঠনের আমির আনিসুর জামাতুল আনসার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস পড়া শেষ করে তিনি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা এলাকার একটি সিএনজি স্টেশনে ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি করতেন। এর আগে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্য ছিলেন। চাকরি করার সময় কুমিল্লার একটি খাবারের দোকানে জামাতুল আনসারের আমির মাইনুল ইসলাম (রক্সি) ও ফেলানি নামের দুই সদস্যের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়।
র্যাব জানায়, ২০২১ সালে মাইনুল গ্রেপ্তার হলে আনিসুর আমির হন। পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থানের সময় তাঁর সঙ্গে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যদের পরিচয় হয়। এই সূত্র ধরে কেএনএফের ছত্রচ্ছায়ায় বান্দরবানের গহিন পাহাড়ে জামাতুল আনসারের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে চুক্তি হয়। আনিসুরের নির্দেশনায় জামাতুল আনসারের জন্য কেএনএফের কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরনের ভারী অস্ত্র ও বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র কেনা হয়। এসব অস্ত্র জঙ্গিদের প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
গত বছরের ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে আট তরুণের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে। তাঁদের খুঁজতে গিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসারের তথ্য পায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে পার্বত্য এলাকা ও সমতলের বিভিন্ন স্থান থেকে এই জঙ্গি সংগঠনের ৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে জামাতুল আনসারের শুরা সদস্য, সামরিক শাখা, অর্থ শাখা, মিডিয়া ও দাওয়াতি শাখার প্রধান রয়েছেন।
র্যাবের তথ্যমতে, গ্রেপ্তার সিরাজ একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা শেষে পটুয়াখালীতে ব্যবসা করতেন। তিনি ২০০৪ সালে জঙ্গি সংগঠন হুজিতে যোগ দেন। হুজির কার্যক্রম স্তিমিত দেখে ২০১৪ সালে তিনি আনসার আল ইসলামে যোগ দেন। পরে ২০১৮ সালে তিনি জামাতুল আনসারে যোগ দেন। আর মাহফুজুর রহমান সিলেটের জগন্নাথপুরে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০১৮ সালে এই জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন।
এদিকে ওই তিন জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের পর জেলাবাসী জঙ্গি আতঙ্কে আছেন। তবে জঙ্গিবাদ রোধ ও দমনে পুলিশ গুরুত্বসহ কাজ করছে বলে জানান মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব।
সুমন দেব প্রথম আলোকে বলেন, জেলার মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে পুলিশ আগে থেকেই গুরুত্বসহ কাজ করছে। ওই তিন জঙ্গি গ্রেপ্তারের পর থেকে পুলিশ আরও সতর্ক অবস্থানে আছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেকগুলো দল নিজেদের মতো করে কাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তাচৌকি বসানো হয়েছে। জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত কেউ থাকলে তারা শিগগিরই আইনের আওতায় চলে আসবে।