মুখোমুখি লড়াইয়ে নামবেন পুরোনো ‘শত্রু’ নেইমার-এমবাপে
২০১৭ সালে বার্সেলোনা ছেড়ে রেকর্ড সর্বোচ্চ ২২২ মিলিয়ন ইউরোতে পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন নেইমার জুনিয়র। একই সময়ে কিলিয়ান এমবাপে ক্লাবটিতে আসেন ধারে, পরের বছর তাকে ১৮০ মিলিয়ন ইউরোতে স্থায়ীভাবে কিনে নেয় পিএসজি। এরপর নেইমার-এমবাপের মাঝে বোঝাপড়া ও বন্ধুত্ব ছিল চোখে পড়ার মতো। ধীরে ধীরে উষ্ণ সম্পর্ক রূপ নেয় শত্রুতায়। একজন ক্লাবে থাকলে, আরেকজন থাকবেন না এমন গুঞ্জনও ছড়িয়েছিল!
শত্রু হলেও কয়েক মৌসুম একসঙ্গে সতীর্থ হয়ে একই দলের জার্সিতে খেলেছেন নেইমার ও এমবাপে। দুই তারকা স্ট্রাইকার এবার পরস্পরের বিপক্ষে লড়াইয়ে নামবেন। ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ২০২৫–এর গ্রুপিং হয়েছে গতকাল (বৃহস্পতিবার) মধ্যরাতে। যেখানে ‘এইচ’ গ্রুপে পড়েছে এমবাপের রিয়াল মাদ্রিদ ও নেইমারের আল-হিলাল। বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্ট ব্রাজিলিয়ান তারকাকে তার আরও কয়েকজন স্বদেশি সতীর্থ ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রদ্রিগো গোয়েস এবং এডার মিলিটাওয়ের–ও মুখোমুখি দাঁড় করাবে।
প্রথমবার ৩২টি দল আগামী বছরের ১৫ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ১২টি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ক্লাব বিশ্বকাপের লড়াই। যেখানে দলগুলো ৮টি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে। প্রতিটি গ্রুপে রয়েছে চারটি করে দল। গ্রুপগুলো থেকে দুটি করে দল শেষ ষোলোয় যাবে। ‘এইচ’ গ্রুপে আল-হিলাল, রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়াও রয়েছে পাচুয়া ও সালজবার্গ। অর্থাৎ, মূল লড়াইটা হবে রিয়াল-হিলালের মধ্যে, শক্তিমত্তায় বাকি দুই দল বেশ পিছিয়ে।
২০২০ সালে পিএসজিকে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের খুব কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিলেন নেইমার-এমবাপে। সেই আসরে এই ব্রাজিল ফরোয়ার্ডের ফর্ম ছিল দুর্দান্ত। কিন্তু বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ফাইনালে হেরে তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়ে যায়। সেই সময় পর্যন্ত নেইমার-এমবাপে মাঠে ও বাইরে আন্তরিক সম্পর্ক ধরে রেখেছিলেন। তাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরে ২০২২ সালের আগস্টে। যখন ফ্রেঞ্চ চ্যাম্পিয়নশিপে মন্টেপেলিয়ের বিপক্ষে পিএসজি ৫-২ গোলে জয় পায়। সেই ম্যাচটিতে প্রথমার্ধে পিএসজি পেনাল্টি পেলে এমবাপে স্পটকিকে ব্যর্থ হন, পরে আরেকটি পেনাল্টি পেলে শট নেওয়া নিয়ে বিবাদে জড়ান নেইমারের সঙ্গে।
একই ম্যাচে নেইমারকে পাস দেওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এমবাপের অগ্রাহ্য করার বিষয়টি আলোচিত ছিল সেই সময়। একইভাবে লিওনেল মেসির সঙ্গেও দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এমবাপের। পরে একপর্যায়ে এই ফরাসি ফরোয়ার্ডকে সমালোচনা করে বানানো একটি অনলাইন কন্টেন্টে নেইমারের লাইক দেওয়া নিয়ে পুরো বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এরপর থেকে নেইমার ও মেসির সঙ্গে এমবাপের সম্পর্ক ক্রমাগত বিষাদে পরিণত হতে থাকে। সেই ক্লাব ছেড়ে এখন তিনজনেই ভিন্ন তিন ক্লাবকে নতুন ঠিকানা বানিয়েছেন।
নেইমার-এমবাপের দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে ফরাসি পত্রিকা লে’কিপে জানিয়েছে, নেইমার আল-হিলালে যোগ দেওয়ার এক বছর পূর্বে পিএসজি কর্তৃপক্ষকে এমবাপে জানিয়ে দেন যে, একসঙ্গে দুজনের জন্য একই ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করা সম্ভব নয়। পরবর্তীতে তার চাওয়ামতো নেইমার এবং ইতালিয়ান মিডফিল্ডার ভেরাত্তিকে ছাড়াই পরিকল্পনাও সাজায় পিএসজি। যদিও সাময়িক বিরতির পর দুজনেই ফের স্কোয়াডে ঢোকেন।
২০২৩ সালে নেইমার পিএসজি ছেড়ে যোগ দেন আল-হিলালে। যদিও এরপর ইনজুরিতেই কেটেছে তার বেশিরভাগ সময়। ছয়টি ম্যাচ খেলতে পেরেছেন সৌদি আরবের ক্লাবটির জার্সিতে। সম্প্রতি এসিএল ইনজুরি থেকে ফিরে ব্রাজিলিয়ান তারকা বদলি হিসেবে নামেন দুটি ম্যাচে। এরপরই নতুন করে ইনজুরিতে পড়েন। ফলে এখন নতুন বছরে নতুন করে মাঠে ফেরার অপেক্ষায় নেইমার। অন্যদিকে, এমবাপে ২০২৪ সালের জুনে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন। যা নিয়ে পিএসজির সঙ্গে তার এখনও ঠোকাঠুকি শেষ হয়নি। এরপর সময় রিয়ালেও তার সময়টা কাটছে অম্ল-মধুর। টানা দুটি ম্যাচে পেনাল্টি মিস করে আছেন সমালোচনার তুঙ্গে।