মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশের শঙ্কা, সর্বোচ্চ সতর্ক বাংলাদেশ
মিয়ানমার থেকে নতুন করে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের বিষয়ে বিভিন্ন দিক থেকে শঙ্কা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, গত ৮ ডিসেম্বর আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর দখল করে। এ নিয়ে ১৭টির মধ্যে ১৩টি শহর আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাত ক্রমবর্ধমান। এ প্রেক্ষিতে নতুন করে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের বিষয়ে বিভিন্ন দিক থেকে শঙ্কা করা হচ্ছে। নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবিসহ বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা এ বিষয়ে সর্বোচ্চ ও যথাযথ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
মুখপাত্র বলেন, থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণের প্রেক্ষিতে গত ১৯ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন থাইল্যান্ড সফর করেছেন। মিয়ানমারের উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং সীমান্তবর্তী দেশগুলোর করণীয় নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, চীন, লাওস ও কম্বোডিয়ার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা যোগ দেন। মিয়ানমারের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা, মিয়ানমারের চলমান অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে মানবপাচার, চোরাচালান, মাদকসহ নানাবিধ অপরাধ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ‘অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা আইন, ২০১২’ অনুযায়ী দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরসমূহ বিভিন্ন দেশে প্রেরিতব্য অপরাধ বিষয়ে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা চেয়ে প্রস্তুতকৃত সব অনুরোধ প্রথমত সরকারের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ তথা জননিরাপত্তা বিভাগে প্রেরণ করে থাকে। তারপর কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ সেসব অনুরোধ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করলে সেই অনুরোধসমূহ সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের নিকট কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রেরণ করা হয়ে থাকে। এ ধরনের অনুরোধের মধ্যে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের আইনগত সহায়তা প্রাপ্তির কেসের সংখ্যাই অধিক।
এই বিষয়সমূহের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দেশের জন্য নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস বা হাইকমিশন সব ধরনের সহায়তা প্রদান করছে।
দিল্লিতে পোলিশ দূতাবাসে বাংলাদেশিদের হয়রানি করা হয়, সে ব্যাপারে আপনারা অবহিত কি না? রিজেকশনের হার বেড়ে গেছে, মুসলিমদের ক্ষেত্রে ভিসা দেওয়া হয় না, এ ধরনের একটি অভিযোগ শিক্ষার্থীরা করে থাকেন। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওয়াকিবহাল কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে রফিকুল আলম বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, কিছু বাংলাদেশি ছাত্রের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। কিন্তু ধর্মপরিচয়ের ভিত্তিতে এগুলো প্রত্যাখ্যাত হয়েছে কি না, সেই সংক্রান্ত কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেন পোল্যান্ডের দূতাবাস চালু করা যায়, সেই বিষয়ে আমাদের দূতাবাস পোলিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগ পর্যন্ত এমন কোনো ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা চলছে যেন পোল্যান্ডে যেতে আগ্রহী শিক্ষার্থী বা কর্মীরা বাংলাদেশেই ভিসার আবেদন করার সুযোগ পান।
তিনি আরও বলেন, এখানে একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ যে, পোল্যান্ডে উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী বিদেশি শিক্ষার্থীদের আবেদন গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কিছু নীতিগত পরিবর্তন এনেছে পোলিশ সরকার, যা ১ আগস্ট ২০২৪ থেকে কার্যকর হয়েছে। এক্ষেত্রে আবেদন করার আগেই একজন শিক্ষার্থীকে সমতুল্য সার্টিফিকেট জোগাড় করতে হবে। জটিল প্রক্রিয়ার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই এটি করতে ব্যর্থ হন এবং অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই বিষয়টি সদয়ভাবে দেখে না। পোলিশ শিক্ষাবিদরা ধারণা করছেন যে, এই বছর বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছরের চাইতে কম হবে কিন্তু আগামী বছরের মধ্যে এটি আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে, কারণ এই তথ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ততদিনে পৌঁছে যাবে।