মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সৈয়দ মো. কায়সার মারা গেছেন
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জাতীয় পার্টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মো. কায়সার মারা গেছেন। শুক্রবার ভোর ৫টা ১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম খান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। পরিচালক জানান, বাধ্যর্কজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি।
গত ৩ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলের প্রিজন সেল ইউনিটে ভর্তি করা হয় জানিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, কায়সার ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ নানা রোগে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন। ফাঁসির আসামি সাবেক এই মুসলিম লীগ নেতা কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। আপিল বিভাগেও মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকার পর ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর তাকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শুনিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। ওইদিন তিনি আপিল বিভাগের কাছে রিভিউ চাইবেন বলে জেল সুপারকে জানিয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধের দায়ে সৈয়দ কায়সারকে ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ১৯৭১ সালে দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করে ওই দুই জেলায় যুদ্ধাপরাধে নেতৃত্ব দেন এই মুসলিম লীগ নেতা।
জিয়াউর রহমানের আমলে তিনি হয়ে যান বিএনপির লোক, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময় জাতীয় পার্টির। দলবদলের কৌশলে তিনি প্রতিমন্ত্রীও বনে গিয়েছিলেন। ২০১৩ সালের ১৫ মে কায়সারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইবুন্যাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে সেই রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যুদ্ধাপরাধের ১৬টি ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে পরের বছর ২ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ কায়সারের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। সেই বিচার শেষে ২০১৪ সলের ২৩ ডিসেম্বর তার মৃত্যুদণ্ডের রায় আসে। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিলও করেন। ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়েও তার ফাঁসির রায় বহাল থাকে।
২০১৪ সলের ২৩ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার দিন মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইবুন্যালের বিচারক বলেন, সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ১৪টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয় ৩, ৫, ৬, ৮, ১০, ১২ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে, যার মধ্যে দুই নারীকে ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে। এই দুই বীরাঙ্গনার মধ্যে একজন এবং তার গর্ভে জন্ম নেওয়া এক যুদ্ধশিশু এ মামলায় সাক্ষ্যও দিয়েছেন।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়