মাদরাসাছাত্র হত্যার অভিযোগে শিক্ষকসহ ৫ জনের নামে মামলা
বরিশালের বানারীপাড়ায় খাল থেকে সৈয়দ আল-ইয়াসিন (১৪) নামে এক মাদরাসাছাত্রের মরদেহ উদ্ধারের আটদিন পর হত্যা মামলা করা হয়েছে।
গত রোববার (২৭ অক্টোবর) রাতে ইয়াসিনের ভাই সৈয়দ আল রুম্মান বাদী হয়ে বানারীপাড়া থানায় এ মামলা করেন।
বিষয়টি জানিয়েছেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোমিনউদ্দিন।
মামলায় মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও তিন শিক্ষকসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। এরা হলেন মাদরাসার শিক্ষক মো. রায়হান হাওলাদার, অধ্যক্ষ আব্দুর রব মিয়া, শিক্ষক আহমাদুল্লাহ আহম্মদ, শিক্ষক আব্দুর রব মিয়ার ছেলে মো. সাইফুল্লাহ মিয়া ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলমগীর হাওলাদার। তাদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে ইয়াসিনকে হত্যা ও পরে মরদেহ গুমের উদ্দেশ্যে খালে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের আউয়ার দারুল উলুম মাদরাসা ও এতিমখানার হেফজ বিভাগের ছাত্র সৈয়দ আল-ইয়াসিনের মরদেহ গত ১৯ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানের পাশের খাল থেকে উদ্ধার করা হয়।
উপজেলার বড় চাউলাকাঠি গ্রামের মৃত মো. সিরাজুল হক মিয়ার ছেলে ইয়াসিন দুদিন আগে অর্থাৎ ১৭ অক্টোবর নিখোঁজ হয়।
বানারীপাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মমিনউদ্দিন জানান, মাদরাসাছাত্র ইয়াসিনকে হত্যার অভিযোগ এনে তার ভাই মামলা করেছেন। মামলায় মাদরাসার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ইয়াসিনকে পিটিয়ে ও লাথি দিয়ে ছিটকে দেওয়ালের ওপর ফেলে হত্যা ও লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে খালে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ বলতে পারবো।
মামলার বাদী সৈয়দ আল রুম্মান বলেন, গত জুলাই মাসে ইয়াসিনকে ওই মাদরাসায় ভর্তি করা হয়। সে কোরআনের ২৮ পারা হাফেজ ছিল। গত ১৭ অক্টোবর মাকে ফোন করে মাদরাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রব মিয়া জানান, ইয়াসিনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিরীহ ও শান্ত প্রকৃতির ইয়াসিন কাউকে না জানিয়ে কোথাও যায় না। তার নিখোঁজের বিষয়টি প্রথমে মেনে নিতে পারেনি পরিবারের কেউ।
রুম্মান অভিযোগ করে বলেন, অধ্যক্ষ আব্দুর রব মিয়া মাদরাসার আশপাশে না খুঁজতে না দিয়ে আমাদের মিসগাইড করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে খালের মধ্যে তার লাশ পাওয়া যায়।
রুম্মান বলেন, ইয়াসিনের দাফনের পর মাদরাসায় গিয়ে জানতে পারি তার নিখোঁজের বিষয়টি আশপাশের কেউ জানতো না। মাদরাসার অন্য ছাত্রদের মাধ্যমে জানতে পারি, ঘটনার দিন শিক্ষক আহমাদুল্লাহ আহম্মদ হুজুরের নেতৃত্বে ছাত্ররা মাটি এনে মাদরাসার উঠোনে রাখে। সবার আদরে বেড়ে ওঠা ইয়াসিন কখনোই শ্রমমূলক কাজ করেনি। তাই ক্লান্ত হয়ে পাকা ঘরের মেঝেতে বসে পড়ে। তখন মাদরাসার শিক্ষক রায়হান হাওলাদার তাকে এলোপাতাড়িভাবে পিটিয়েছেন। এক পর্যায়ে ওর বুকে, চোখে ও মুখে সজোরে লাথি দেন। এতে ইয়াসিন দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে পড়ে সেখানে অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর ইয়াসিনকে কাঁথা দিয়ে পেঁচিয়ে আব্দুর রব মিয়া, রায়হান হাওলাদার, আহমাদুল্লাহ আহম্মদসহ কয়েকজন ধরে গুদাম ঘরে রাখেন। পরে রাতে ইয়াসিনের লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে নদীতে ফেলে দেয়।
ইয়াসিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে জড়িতদের শাস্তি চান তার ভাই রুম্মান।